ইসলামাবাদ, ৩ নভেম্বর: বৃহস্পতিবার পদযাত্রায় গুলিবিদ্ধ হলেন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। গুজরানওয়ালা জেলার ওয়াজিরাবাদ শহরে ঘটে এই মর্মান্তিক ঘটনা। সেখানে পদযাত্রার সময় পায়ে গুলি লেগে রক্তাক্ত হন তিনি। এই ঘটনায় বেনজির ভুট্টোর মৃত্যুর কথা মনে করিয়ে দিল দুষ্কৃতীরা। ২০০৭ সালের ২৭ ডিসেম্বরের সেই মর্মান্তিক ঘটনায় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোকে টার্গেট করে গুলি চালানো হয়। নির্বাচনী প্রচারসভায় বুলেটের গুলি ভেদ করে তাঁর ঘরে। রক্তাক্ত অবস্থায় মুহূর্তে লুটিয়ে পড়েন ভুট্টো। এবারও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি।
জায়গাটি রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে প্রায় ২০০ কিমি দূরে। এদিন ঘটনাস্থলে ছিল জনতার ভিড়। তখন সেখানে চলছিল ইমরানের দলের ‘লং মার্চ’। সেখানেই ঘটে এই প্রাণঘাতী হামলা। আততায়ীরা টার্গেট করে ইমরান খানকে। অল্পের জন্য তিনি প্রাণে রক্ষা পেলেও ডান পায়ে গুলি লাগে তাঁর। এই ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। তাঁদের মধ্যে আছেন ইমরান ঘনিষ্ঠ সেনেটর ফয়জল জাভেদ। এছাড়া দলের আরও বেশ কয়েকজন পিটিআই নেতাকর্মী জখম হয়েছেন। এই ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। ভিড়ের মধ্যে থেকে এক হামলাকারী যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। সে জানিয়েছে, ‘ইমরান খান মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে। ওকেই খতম করতে এসেছিলাম।’ পৃথিবীর একাধিক দেশের রাষ্ট্রনেতা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে ধিক্কার জানিয়েছেন। পাকিস্তানের উদ্ভূত পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি দ্বিতীয় দফার ‘আজাদি মার্চ’ শুরু করেছেন ইমরান। একেই বলা হচ্ছে ‘লং মার্চ’। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের জোট সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে এই পদযাত্রা ইমরানের। গত শুক্রবার লাহোর থেকে এই মিছিল শুরু হয়।
ইসলামাবাদে এই মিছিল সমাপ্ত হওয়ার কথা থাকলেও মাঝপথে ঘটে যায় এই রক্তাক্ত ঘটনা। আল্লা ওয়ালা চকে চলমান কন্টেনার ট্রাকে উঠে ভাষণ দিতে যাচ্ছিলেন ইমরান। চারিদিকে সমর্থকদের ভিড়। সেসময় ইমরানের কন্টেনার-ট্রাক লক্ষ্য করে বাঁদিক থেকে গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। হামলাকারীদের হাতে ছিল পিস্তল ও এ কে ৪৭ রাইফেল। যাঁর হাতে পিস্তল ছিল সেই প্রথম গুলি চালায় বলে অভিযোগ। এক যুবক হামলাকারীকে পাকড়াও করে ফেলেন। পিটিআই-এর নেতা কর্মীরা তাঁকে ‘হিরো’ বলে সম্বোধন করেছে।
এদিকে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর পুলিস ইমরানকে কন্টেনার-ট্রাক থেকে সঙ্গে সঙ্গে বুলেটপ্রুফ গাড়িতে তুলে সরিয়ে নিয়ে যায়। ইমরান এখন লাহোরের শওকত খানুম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। যদিও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর দুই পায়েই বুলেটের ক্ষত রয়েছে বলে সূত্রের খবর।
এদিকে এই হামলার ঘটনায় ইমরান দেশের বর্তমান সরকারের বিশেষ তিনজনকে দায়ী করেছেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, অভ্যন্তরীণমন্ত্রী রানা সালাউল্লা এবং আইএসআইয়ের মেজর জেনারেল ফয়জল নাসির এই অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছেন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর দলের সেক্রেটারি জেনারেল আসাদ উমর হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এই অভিযোগ করেছেন।
তবে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এই হামলার কঠোর নিন্দা করেছেন। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। তিনি ঘটনার রিপোর্ট তলব করেছেন পুলিস ও প্রশাসনের কাছে। সেই নির্দেশ মতো সানাউল্লার অভ্যন্তরীণ মন্ত্রক ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।