ঢাকা: ভারতে ২০০০ টাকার নোট বাতিলের ঘোষণা হতেই বাংলাদেশে জাল নোটের চোরা কারবারিদের রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে। সেজন্য এদেশের চোরাবাজারে মজুত জাল নোট দ্রুত বাজারে ছাড়তে চাইছে তারা। সম্প্রতি গোয়েন্দাদের হাতে এমনই তথ্য এসেছে। আরও জানা গিয়েছে, এই জাল নোটে দেওয়া হচ্ছে ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্ট। টার্গেট নেওয়া হয়েছে আগামী জুলাই মাসের মধ্যে কয়েক কোটি টাকার মজুত জাল নোট বাজারে ছাড়তে হবে। কারণ হাতে আর বেশি সময় নেই। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারতে এই দুই হাজার টাকার জাল নোটের মেয়াদ ধার্য করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে এই নোট বাজার থেকে তুলে নেওয়া হবে। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকা চাঁপাই নবাবগঞ্জ, রাজশাহী সহ বিভিন্ন সীমান্তে কোটি কোটি টাকা ২ হাজারের জাল নোট মজুত করা হয়েছে। সুযোগ বুঝে সেগুলি ভারতের বাজারে পাচার করা হবে।
প্রসঙ্গত ভারতীয় জালনোট তৈরির ডেরা রয়েছে বাংলাদেশের একাধিক এলাকায়। ভারতে ২০১৬ সালে নোটবাতিলের পর নতুন ২ হাজার ও ৫০০ টাকার নোট চালু হয়। সেই নতুন নোট চালুর কয়েকদিনের মধ্যেই হুবহু জালনোট তৈরি করে ফেলে পাকিস্তান ও বাংলাদেশে জাল নোটের কারিগররা। সীমান্ত দিয়ে সেই নোট ভারতে পাঠায় পাচারকারীরা। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, আগে চট্টগ্রাম এলাকায় বেশি পরিমাণ জালনোট তৈরি হতো। এখন ঢাকার লালবাগ, নবাবগঞ্জ, বেড়িবাঁধ এলাকা সহ রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তে ছোট ছোট ডেরা তৈরি করেছে কারবারিরা।
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ২ হাজার টাকার ভারতীয় জাল নোটের তিনটি ক্যাটাগরি আছে। ‘এ‘, ‘বি’ এবং ‘সি’। ‘এ’ ক্যাটাগরির নোট একেবারে হুবহু আসল নোটের মতো। নোটের কাগজ, সিকিউরিটি থ্রেট উন্নতমানের দেওয়া হয়। এই ধরনের নোট তৈরির খরচও একটু বেশি। ‘বি’ অথবা ‘সি’ ক্যাটাগরির নোট একটু মোটা। তাতে অতটা সূক্ষ্ম ব্যাপার থাকে না। এগুলি সাধারণত গ্রামাঞ্চলের দিকে ছড়ানো হয়। ‘এ’ ক্যাটিগরির নোট মূলত শহর এলাকাতেই ছড়িয়ে দেয় পাচারকারীরা। এই ‘এ’ ক্যাটিগরির জাল নোট তৈরি করতে প্রতি লক্ষে ৬-৮ টাকা হাজার খরচ হয়।
সূত্রের খবর, এতদিন বাংলাদেশের চোরাবাজারে এক লক্ষ টাকার জাল নোটের পাইকারি দর ছিল ১৮-২০ হাজার। ভারতের বাজার থেকে তুলে নেওয়ার ঘোষণার পর তা ৫০ শতাংশ কমে হয়েছে ৯-১০ হাজার টাকা! এব্যাপারে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, ২০১৬’এর নোট বাতিল পর্বের পর থেকে যে পরিমাণ জালনোট ধরা পড়েছে, তার ৬০ শতাংশই ২ হাজার টাকার। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, বাংলাদেশে ২ হাজারের যত জালনোট রয়েছে, তা দ্রুত ভারতে পাচার করতে চাইছে কারবারিরা। এই মুহূর্তে মালদহের কালিয়াচক ও বৈষ্ণবনগর সীমান্ত এবং মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান এলাকায় ৫-৬ কোটি টাকার জালনোট মজুত করে রেখেছে পাচারকারীরা। ৫০ শতাংশ ছাড় দিয়ে জালনোট কারবারিরা খরচের টাকা তুলতে চাইছে। তবে, মালদহ সহ বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার উপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। যাতে এই বিপুল পরিমাণ জালনোট ভারতে ঢোকা মাত্রই ধরা পড়ে।