শ্রীনগর: রোজকার রুটিন মেনে সেদিনও তিনি ব্যস্ত ছিলেন দেওয়ালে ছবি আঁকার কাজে। সেই সময়েই এল সুখবর— নিট-এ কৃতকার্য হয়েছেন। হাতের কাজ ফেলে সঙ্গে সঙ্গে নিটের ওয়েবসাইট খোলেন উমর আহমেদ গনি। সফল পরীক্ষার্থীদের তালিকায় নিজের নাম দেখে আনন্দে আর চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। হবে নাই বা কেন, তাঁদের পরিবারে এই প্রথম কেউ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় কৃতকার্য হলেন।
উমরের বেড়ে ওঠা পুলওয়ামা জেলার জাগ্গিগাম গ্রামে। একজন চিত্রশিল্পী হিসেবেই পরিবারের খরচ চালানোর গুরুদায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। ইচ্ছা থাকলেও টাকার অভাবে স্কুলজীবনে মোবাইল কিনতে পারেননি। উমর জানালেন, ‘ক্লাস টুয়েলভ পর্যন্ত আমার মোবাইল ছিল না। কিন্তু, তারপর অনলাইন ক্লাস করার জন্যই মোবাইল কিনতে হয়।’ টাকার অভাবের কারণে নিটের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ নেওয়াও তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। গভর্মেন্ট হাই সেকেন্ডারি স্কুলের ছাত্র উমরকে তাই বাড়িতেই নিটের প্রস্তুতি নিতে হয়েছিল। বাবা পেশায় শ্রমিক। ভাইও একই কাজ করেন। পড়ার খরচ চালানোর জন্য উমরকে তাই দেওয়ালে ছবি আঁকার কাজ দ্বিগুণ বাড়াতে হয়েছিল। তিনি জানালেন, ‘সারাদিন দেওয়ালে ছবি আঁকার কাজ করতাম। সন্ধ্যা ছ’টার পর থেকে মাঝরাত পর্যন্ত পড়াশোনা করতাম।’ কখনও কখনও পড়ার চাপে গভীর রাত পর্যন্ত জাগতে হতো। এই পরিশ্রমের ফলও পেয়েছেন হাতেনাতে। নিটে তাঁর স্কোর ৬০১। উমরের আশা, জম্মুর সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পাবেন।
উমরের সাফল্য রাতারাতি জনপ্রিয় করে তুলেছে জাগ্গিগামকে। গ্রামে এখন রীতিমতো উৎসবের মেজাজ। আত্মীয়, বন্ধু, শুভানুধ্যায়ীরা রোজই ভিড় করছেন তাঁর বাড়িতে। অবশ্য উমরই শুধু নন, কাশ্মীরে আরও দু’জন দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করেনিটে সফল হয়েছেন। কুইগাঁও ইমামের দুই বোন প্রথম চেষ্টাতেই নিটে কৃতকার্য হয়েছেন। বদগাঁওয়ের প্রত্যন্ত গ্রামের এক ছাত্রীও এই রয়েছেন তালিকায়।