ইম্ফল: অশান্ত মণিপুর ছাড়তে চাইছেন ভিন রাজ্যের বাসিন্দারা। সোমবার সকাল থেকেই ইম্ফল বিমানবন্দরে উপচে পড়ছে ভিড়। সেই সঙ্গে রকেট গতিতে বেড়েছে বিমানের টিকিটের চাহিদাও। মওকা বুঝে ভাড়া আকাশচুন্বী করে ফেলেছে বিভিন্ন উড়ান সংস্থা। ইম্ফল থেকে কলকাতা আসার প্রতিটি টিকিট বিক্রি হচ্ছে ১২ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকায়। সাধারণ ভাড়ার থেকে যা ৬ থেকে ৮ গুণ বেশি। কেননা অন্য সময়ে ইম্ফল-কলকাতা রুটে এই ভাড়া (ওয়ান-ওয়ে) আড়াই থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করে। কলকাতার পাশাপাশি ইম্ফল-গুয়াহাটি রুটেও বিমানের ভাড়াও সমানতালে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন উড়ান সংস্থা এবং অনলাইন বুকিং সংস্থার সাইটে দেখা গিয়েছে, এই রুটে একবার যাওয়ার ভাড়া ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা ছুঁয়ে ফেলেছে। ফেরার তাগিদে সেই ভাড়া দিয়ে টিকিট কাটতে বাধ্য হচ্ছেন মানুষ। যদিও ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে বিমান সংস্থাগুলি জানিয়েছে, তাদের সমস্ত উড়ানই চালু রয়েছে। তবে সমস্ত টিকিটই বুক। চাহিদা মেটাতে অতিরিক্ত বিমান পরিষেবাও চালু করা হয়েছে।
সোমবার সকাল থেকেই ইম্ফল বিমানবন্দরে টিকিট কাটার জন্য পড়ুয়া এবং অন্য যাত্রীদের হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। বিমানবন্দর দেখে মনে হবে কোনও বাসস্ট্যান্ড কিংবা রেল স্টেশন। টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন হাজারের উপর মানুষ। কেউ আবার মেঝেতে শুয়ে বিমান ধরার অপেক্ষায় রয়েছেন। ভিড় সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় নিরাপত্তা বাহিনীকে। এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার তরফে যাত্রীদের জন্য খাবারের স্টল খোলা হয়েছে। ইম্ফলে কর্মরত কলকাতার এক বাসিন্দা বলেন, ‘পরিস্থিতির সুযোগে বিমান ভাড়া লাফিয়ে বেড়েছে। চলতি সপ্তাহে ইম্ফল-কলকাতা রুটের বিমানের সব টিকিট শেষ। আগামী সপ্তাহে কলকাতা ফেরার টিকিট পেয়েছি।’
হিংসাদীর্ণ মণিপুরে শান্তির খোঁজে সাধারণ মানুষ। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে মরিয়া তাঁরা। গত ৪৮ ঘণ্টায় প্রাণহানির কোনও খবর নেই। এদিন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা সুপ্রিম কোর্টে এই তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে মণিপুর। বিভিন্ন এলাকা থেকে কার্ফুও তুলে নিচ্ছে প্রশাসন। তবে বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া মানুষের খাদ্য, ওষুধ সহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের জোগান নিশ্চিত করতে রাজ্য ও কেন্দ্রকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। মণিপুর নিয়ে আগামী ১৭ মে পরবর্তী শুনানি হবে সুপ্রিম কোর্টে।
এদিন সকাল ৫ থেকে ৮ পর্যন্ত ইম্ফল, চূড়াচাঁদপুরের মতো উত্তপ্ত এলাকায় থেকে কার্ফু শিথিল করে প্রশাসন। ওই সময়ে ইম্ফলের বাজার গুলিতে খাদ্যদ্রব্য কেনার জন্য মানুষের ভিড় জমে যায়। বেশকিছু গাড়ি, রিকশও এদিন শহরে চলাচল করে। তবে পরিস্থিতি যাতে নাগালের বাইরে না যায়, তার মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেনা। ১০০ কলামের উপর সেনা মোতায়েন রয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায়। পাশাপাশি হেলিকপ্টার ও ড্রোনের সাহায্যেও চলছে কড়া নজরদারি। মায়ানমার সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ না ঘটে, সেদিকেও নজর রাখছে সেনাবাহিনী।