কলকাতা: সারা দেশে বিজেপি বিরোধিতার অন্যতম প্রধান মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে বাদ রেখে বিরোধী জোট গঠনের প্রচেষ্টা যে সফল হবে না, অবিজেপি দলগুলির নেতৃত্বের কাছে ক্রমশ তা স্পষ্ট হচ্ছে। সেই সূত্রেই এবার এক টেবিলে বসে গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে রণকৌশল নিয়ে আলোচনা করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আজ, সোমবারই নবান্নে এই বৈঠক হবে। এনডিএ ছেড়ে লালুপ্রসাদের আরজেডিকে নিয়ে বিহারে সরকার গঠনের পর নীতীশও বিজেপি বিরোধিতার অন্যতম মুখ হয়ে উঠেছেন। এই প্রেক্ষাপটে দুই মুখ্যমন্ত্রীর আজকের বৈঠকের দিকে তামাম রাজনৈতিক মহলের নজর থাকছে।
আগামী বছর লোকসভা নির্বাচন হলেও বিরোধী জোটের ভিত মজবুত করতে গেলে এটাই সঠিক সময় বলে মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা। সেই মতো জোটের সলতে পাকানোর কাজ শুরু হয়েছে বেশ কিছুদিন আগে থেকেই। গত ১৭ মার্চ কালীঘাটে তৃণমূল সুপ্রিমোর বাড়িতে এসে বৈঠক করেন সমাজবাদী পার্টির সভাপতি অখিলেশ যাদব। ঠিক তার সাতদিন বাদে মমতার সঙ্গে বৈঠক করতে কালীঘাটে আসেন কর্ণাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা জনতা দল (সেকুলার) নেতা এইচ ডি কুমারাস্বামী। কিছুদিন আগে পুরী সফরে গিয়ে ভুবনেশ্বরে বিজু জনতা দলের নেতা তথা ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকের সঙ্গেও দেখা করেন মমতা। তবে জোট-চর্চার এই আবহে মমতা-নীতিশের বৈঠক আগে হয়নি। গত বছরের শেষের দিকে কলকাতায় ইস্টার্ন জোনাল কাউন্সিলের বৈঠক হয়েছিল। পূর্বাঞ্চলের একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নীতিশের ওই বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি আসতে পারেননি। পাঠিয়ে ছিলেন উপ মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বীকে।
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জোটের অবয়ব স্পষ্ট হলেই বিজেপির বিরুদ্ধে একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইছে বিভিন্ন বিরোধী দল। তার জন্য গত কয়েকদিন ধরে রাজনীতির আনাচেকানাচে তৎপরতা চোখে পড়ছে। কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খাড়্গে, আপের অরবিন্দ কেজিওয়াল, সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি, সিপিআইয়ের ডি রাজা, এনসিপির শরদ পাওয়ারের মতো নেতাদের সঙ্গে ইতিমধ্যে আলোচনা করেছেন নীতিশ। তাঁদের সঙ্গে এ যাবৎ আলোচনার নির্যাস নিয়েই জনতা দল (ইউনাইটেড) সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলতে আসছেন বলে খবর। সূত্রের খবর, আজ বিকেলে মমতার সঙ্গে বৈঠকের পরই উত্তরপ্রদেশে গিয়ে অখিলেশের সঙ্গে কথা বলতে পারেন নীতীশ। এই তৎপরতার রেশ টেনে শনিবারও মমতা বলেছেন, ‘দেশের ক্ষমতায় কে আসবে, এক বছর বাদে তার ফয়সালা হবে। আমি বলছি, সবাই এককাট্টা হলে চেয়ার টলে যাবে।’ এই প্রেক্ষিতে নীতীশের দলের ন্যাশনাল সেক্রেটরি রাজীবরঞ্জন প্রসাদ বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খুব বড় নেত্রী। বাংলায় বিজেপির বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই সবাই দেখেছে। আমরাও চাই, ওঁর এই লড়াই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ুক।’ তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়ের মন্তব্য, ‘কেন্দ্রে কর্তৃত্ববাদী একটা সরকার চলছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে দিতে চাইছে। তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আঞ্চলিক দলের সরকারগুলি। তাই আগে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে তাদেরকেই। তার জন্য আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে।’