Home Literature রম্যরচনা: স্কুলে বার্ষিক ক্রীড়া

রম্যরচনা: স্কুলে বার্ষিক ক্রীড়া

110
0

অরবিন্দ সরকার
বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ

রামজীবনপুর হাইস্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠান। মাঠের কোনে একটি প্যান্ডেল করা হয়েছে। সুসজ্জিত চেয়ারে প্রধানশিক্ষক, বিদ্যালয় পরিচালন কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক মশাই এবং জমিদাতা সদস্য ফড়িং সমাদ্দার মশাই।
মাঠের চারিপাশে ছাত্র ছাত্রী ও অভিভাবকদের ভীড়। মাঠের মধ্যে প্রতিযোগী ও মাষ্টারমশাইগন।
দৌড়,হাইজাম্প,লঙ্ জাম্প,বস্তাদৌড়, মিউজিক্যাল চেয়ার, খেলা শেষে ” যেমন খুশি সাজো প্রতিযোগিতা।
ভোম্বল আজ স্কুলে হেডমাস্টার সেজে মাঠের মধ্যে বসে পড়লো,আরো প্রতিযোগী তারা কেউ মেথর, কেউবা স্ট্যাচু,কেউ ফেরিওয়ালা সেজে মাঠের মধ্যে বিচরন করতে লাগলো। একমাত্র বিবেকানন্দ স্ট্যাচুর নীচে ভোম্বল চেয়ারে বসে। স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে হারাধন গড়াই।নবম শ্রেণীর ছাত্র সে। ভোম্বল দশম শ্রেণীর ছাত্র।
হেডমাস্টার রূপী ভোম্বল এবার দাঁড়িয়ে স্টেজ থেকে মাইক আনতে বললো। সঙ্গে সঙ্গে ওর ক্লাসের বন্ধুরা মাইক্রোফোন নিয়ে ভোম্বল কে দিলো।
ভোম্বল- নমস্কার, আমি এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক, আপনারা যারা এসেছেন সম্মানীয় হিসেবে ও যারা দাঁড়িয়ে আছেন অভিভাবক সকলকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। আজকে বার্ষিক ক্রীড়া। খেলাধুলা শরীরকে গঠন করে ও সুস্থ সবল করে তোলে। মঞ্চে আমরা চা বিস্কুট খাচ্ছি আপনারা দেখছেন কিন্তু আমি দিতে পারছিনা।কারন মিড্ ডে মিলে তাহলে গড়মিল হবে। পরিচালন কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক আছেন উনারা আজকের মিড ডে মিলের ছাত্রদের আহার বন্ধ করে আমাদের আহারের ব্যবস্থা করেছেন। চা না হলে ঠিকমতো মুড আসে না।আজ সকাল সকাল স্কুলে এসেছি না খেয়েই। তাছাড়া রান্নার মেয়েরা আজ মাংস রান্না করছেন।ওরা ও আমরা মিলে– খেলার বিরতি নেই তাই একে একে খেয়ে আসবো ভোট নেবার মতো করে। ছেলেমেয়েরা খাওয়া দাওয়া করলৈ খেলাধুলা করতে পারবে না তাই ওদের জন্য মিড্ ডে মিল বন্ধ। আজ কমিটির লোকজন , রান্নার লোকজন,ও আমার সহকর্মীদের ভুঁড়ি ভোজন হবে।
স্টেজে সভাপতি ও সম্পাদক দুজনেই ঠ্যাং দুলিয়ে চলেছেন। হাততালি হাততালি, সবাই দাও। নমস্কার সকলকে জানাই আপনাদের।
খেলা সমাপ্ত হয়ে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। সভাপতি ও সম্পাদক মশাই বেশীরভাগ পুরস্কার ছাত্র ছাত্রী দের হাতে তুলে দিলেন। একমাত্র যেমন খুশি তেমন সাজো প্রতিযোগীতায় পুরস্কার দিলেন ভোম্বল চরণ দাসকে স্বয়ং আসল প্রধান শিক্ষক মশাই।
এবার সভাপতি বক্তব্য রেখে সমাপ্তি ঘোষণা করবেন।
সভাপতি বিজয় কুমার পরামানিক মাইক হাতে নিয়েই শুরু করলেন বক্তৃতা, শুনোগো তুমরা সবাই,এই যে খেলা দেখলা তুমরা,এর থেকা আমি অনেক বেশি খেলতে পারি। আমি সব খেলায় প্রথম হতাম সুযোগ পেলে।এবার রেজুলেশনের মাধ্যমে আগামী বছর থেকে কমিটির সদস্যরা যাতে খেলতে পারে সেই ব্যবস্থা করবো ‌।আমরাও মাঝে মাঝে মিড ডে মিল খাই। যেদিন মাছ মাংস ডিম থাকে সেদিন। আমরা দুই তিনটি ডিম খাই। ছাত্র ছাত্রী দের ডিম ভেঙে গিয়ে আধখানা জোটে। এতো বড়ো চৌহদ্দি প্রাচীর দিয়ে ঘেরলাম।ঘর করলাম চারখানা। আমি তো আর পেট বাড়ীতে জমা রেখে আসিনি।তাই স্কুলে খাই। ছাত্র ছাত্রী দের খাওয়ানোর আগে কতৃপক্ষের খেয়ে দেখা দরকার। সরকার বাহাদুর তাই বলেছেন। মেম্বার হতে বেশ কিছু টাকা ধার হয়েছিল। বিল্ডিং ও স্কুলঘেরার টাকার শ্রাদ্ধ করে, সব শোধবোধ করে ব্যাঙ্কে জমা রেখাছি ষাট হাজার টাকা।বাপের কালেও এতো টাকা দেখিনি। ভাগ্যিস মেম্বারের জোরে আজ বাড়ি গাড়ি হলো‌ ।তবে মেম্বার হতেও শরীর দরকার। মোটাসোটা হৃষ্টপুষ্ট না হলে কেউ ভোট দেবে না।ভোট কি দেবে? জোর করে ভোট নিতে হয়।
সামনে কেউ নেই। পেছনে ছাত্র ছাত্রী সবাই মিলে প্যাণ্ডেল খুলছে।
সভাপতি এবার বললেন, এবার থেকে খেলা শুরু হওয়ার আগে আমি বক্তৃতা দেবো। লোকজন পালিয়ে যাওয়ার পর আমার বলার পালা! এ সহ্য করবো না।এই বলে মাইক্রোফোনটা মাঠের মধ্যে ছুঁড়ে দিলেন। নীচে নেমে এসে বাড়ীর মুখো হলেন।শেষ ঘোষণা আর হলো না।

Previous article১০ বছর বয়সে মহাসাগরে চিরকুট ভাসিয়ে ফিরে পেলেন ৩৭ বছর পর!
Next articleবিশ্ব ইতিহাসে ১৮ জানুয়ারি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here