Home State দফা কমলে বাড়তো কোভিড সমস্যা ও বুথ দখল

দফা কমলে বাড়তো কোভিড সমস্যা ও বুথ দখল

231
0

উত্তর পাল, কলকাতা: দফা কমিয়ে করোনা প্রতিরোধ সম্ভব ছিল না। বরং ভোট প্রচার বন্ধ রাখলে, জনসভা ও মিছিল বন্ধ হলে করোনা প্রতিরোধ অনেকটাই সম্ভব হতো। ৮ দফা নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পর শাসক দল তৃণমূল ও সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। তিনি দোষারোপ করেছেন, নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের হয়ে কাজ করছে। কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার নেতা-নেত্রীরা শুধুমাত্র দফা না কমিয়ে প্রচারে নিষেধাজ্ঞার উপরে গুরুত্ব দিলেন না। যদি প্রকৃতই তাদের সদিচ্ছা থাকত, তাহলে সবার আগে শাসক দলের পক্ষ থেকে তারা বলতেই পারতেন, ‘এবার নির্বাচনে আমরা চাইছি প্রচার, জনসভা, পথসভা, রোড শো সহ অন্যান্য রাজনৈতিক প্রক্রিয়া বন্ধ করে শুধুমাত্র ভার্চুয়াল প্রচারের নির্দেশ দিক নির্বাচন কমিশন।’ মমতা ও তাঁর দলের নেতারা সেই কথা কিন্তু একবারও বলেননি। উল্টে তারা বারবার নির্বাচন কমিশনকে টার্গেট করেছেন। দেশের স্বতন্ত্র এই প্রতিষ্ঠানকে বারবার কাঠগড়ায় তুলেছেন। নজিরবিহীনভাবে অভিযোগ করেছেন কমিশন কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপির দালালী করছে। তাদেরকে সুবিধা পাইয়ে দিতে চাইছে।
উল্লেখ্য, এরাজ্যে নির্বাচনে পক্ষপাতিত্ব, সন্ত্রাস ও সংঘর্ষ একটি নিয়মিত ব্যাপার। আর এর ফলস্বরূপ প্রাণ যায় বেশ কিছু সাধারন মানুষের। নেতাদের নোংরা রাজনীতির শিকার হন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাধারণ কর্মী সমর্থকরা। যা ভারতের অন্যান্য রাজ্যে সচরাচর ঘটে না। বুথ দখল, ছাপ্পা, জোর করিয়ে শাসক দলের পক্ষে ভোট করানোর অভিযোগ সেই বামফ্রন্টের আমল থেকেই। কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতেও এই অনাচার আজও অব্যাহত। 2021 এর বিধানসভা নির্বাচনে এবারও পশ্চিমবঙ্গে তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। যার ফলস্বরূপ কোচবিহারের শীতলকুচিতে 126 নম্বর বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে প্রাণ গেল চার জন তৃণমূল কর্মীর। তারা সেদিন গ্রামের সাধারণ হিন্দু ভোটারদের ভোট দানে বাধা দিয়েছিল এই আশঙ্কায়, এরা শাসক দল বিরোধী। সেজন্য তৃণমূলকে ভোট দেবে না। ভোট দেবে বিজেপিকে। কেন্দ্রীয় বাহিনী সহজভাবে অনেকবার চেষ্টা করেও শাসকদলের এই দুষ্কৃতীদের সেদিন আটকাতে পারেননি। পরিস্থিতি যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন তারা গুলি চালাতে বাধ্য হন। একইভাবে শীতলকুচি বিধানসভার 285 নম্বর বুথে দুষ্কৃতীদের গুলিতে প্রাণ যায় আনন্দ বর্মনের। অতএব নির্বাচন কমিশন যে ৮ দফা নির্বাচনের ঘোষণা করেছেন তা যথোপযুক্ত। এই নিয়ে কোন প্রশ্ন উঠতে পারে না। বরং এই ৮ দফা নির্বাচন হওয়ার জন্য কোভিড বিধি মানার পক্ষে অনেকটা সহায়ক হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের উপরে চাপ কমেছে, বুথকে কন্ট্রোল করার ক্ষেত্রে অধিক কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখা সম্ভব হয়েছে, ভোট কর্মীরাও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করতে পেরেছেন। মোদ্দা কথা, মানুষকে কন্ট্রোল করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের লোকবল বেড়েছে। ভোট হয়েছে অনেক শান্তিপূর্ণভাবে এবং অনেকাংশেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? মুখ্যমন্ত্রীর প্রকৃতই কি করোনা প্রতিরোধে প্রকৃত সদিচ্ছা ছিল? যদি থেকেই থাকে, তাহলে তিনি কেন প্রথম থেকে প্রচারের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারির জন্য কমিশনের কাছে আবেদন করলেন না? তাহলে কি দফা কমিয়ে শীতলকুচির মতো আরো বেশকিছু ঘটনা ঘটাতে চাইছিল শাসক দল? আরো কিছু বুথ দখল, গণতান্ত্রিক অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে শাসক দলের পক্ষে ভোট করানো, পঞ্চায়েত ভোটের মত মানুষকে ভোট দিতে না দিয়ে জোর করে তাদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া, নিজেদের কর্মী ও নেতাদের মাধ্যমে শাসক দলের লোক দিয়ে ইচ্ছামত ভোট দেওয়া, এটাই কি উদ্দেশ্য ছিল মমতা ও তার দলের নেতাকর্মীদের?

Previous articleভারতে একদিনে করোনা রোগী বাড়ল প্রায় ১ লক্ষ ৩৪ হাজার
Next articleবাংলা ভাষাকে সরকারি ভাষার দাবিতে যাদবপুরে বৈঠক বঙ্গবাসী মহাসভা ফাউন্ডেশনের

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here