কুমার বিক্রমাদিত্য, কলকাতা : প্রচণ্ড গরমেও বাঁশি বাজিয়ে বৃষ্টি নামাতেন আকবর বাদশাহের নবরত্নের অন্যতম সদস্য তানসেন। তাই বলে এই গ্রীষ্মের রোদে সেই “মেঘমল্লার” বাজিয়ে রেইনম্যানের ভোটপ্রচার? ভাবাই যায় না। অথচ বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতা ও আইনজীবি নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ রায় সেই কাজটাই করে চলেছেন। আদতে তিনি বিজেপি সমর্থক হলেও এবার বিধানসভা নির্বাচনে যাদবপুর কেন্দ্রে ভারতীয় জনসঙ্ঘের প্রার্থী। বিজেপির নীতি বিচ্যুতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই ভোটে তাঁর এই প্রতিদ্বন্দ্বীতা। আর সেই ভোট প্রচারে এক অভিনব পন্থা অবলম্বন করেছেন কলকাতা হাইকোর্টের এই দুঁদে আইনজীবী ওরফে রেইনম্যান বলে পরিচিত নৃপেন বাবু। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোটের প্রচার গাড়িতে মাইক, মাইক্রোফোন আর মিউজিসিয়ান বসিয়ে বাঁশিতে আনছেন মেঘমল্লারের সুর। পথচলতি মানুষ মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে শুনছেন সেই মধুর সুর।
আইনজীবী নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ রায় কর্মজীবনে প্রথমে আইআরএস বিভাগের আধিকারিক ছিলেন। এরপর পশ্চিমবঙ্গের বাণিজ্য কর বিভাগের চাকরিতে আসেন। সেখান থেকে অবসর গ্রহণের পরে এখন কলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসায় নিযুক্ত আছেন। তিনি দেশে বাঙালীর নাগরিকত্ব ও অধিকার রক্ষায় সর্বভারতীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বঙ্গভাষী মহাসভা ফাউন্ডেশনের আইনজীবী হিসেবেও অনেক মামলা লড়েছেন। মেঘালয়, আসাম, ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গে এব্যাপারে তিনি সক্রিয়ভাবে কাজ করে চলেছেন। তাঁর একটি বিশেষ শিল্প প্রতিভা আছে। তিনি ভালো বাঁশি বাজাতে পারেন। তানসেনের মতো “মেঘমল্লার” রাগে নামাতে পারেন বৃষ্টিও। সেজন্য তাঁর নাম ‘কলকাতার তানসেন’ ওরফে “রেইনম্যান”। এব্যাপারে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে তাঁর সুখ্যাতিও আছে। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহের সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ যখন গরমে হাঁসফাঁস করেন, তিনি তখন বাঁশিতে মেঘমল্লার বাজিয়ে বৃষ্টি নামিয়ে ধরিত্রীকে শীতল করতে সিদ্ধহস্ত। এজন্য গরমের সময় বিভিন্ন রাজ্য থেকে বৃষ্টি নামানোর জন্য ডাক আসে তাঁর। তিনি তাঁর সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে হাজির হন সেখানে। মেঘমল্লার রাগে প্রকৃতিকে বশ করেন। আকাশ থেকে মেঘ ভেঙে নেমে আসে বৃষ্টি।
নৃপেনবাবুর দাবি, তাঁর মেঘমল্লারের আবেদনে দুই দিন বৃষ্টিও নেমেছে শহরে। কাকতালীয় হলেও এটাই সত্যি। তবে সেই কৃতিত্বটা যাদবপুর বিধানসভায় ভোটের বাক্সে কতটা প্রভাব ফেলে, এখন সেটাই দেখার।