নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা: ২ মে বিধানসভা নির্বাচনের গণনার দিন দুপুর বেলা থেকে আভাস পাওয়া গিয়েছিল একক সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে ক্ষমতায় আসতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু পাশাপাশি এটাও বোঝা গিয়েছিল বিজেপির একচ্ছত্র নেতৃত্বে রাজ্য বিধানসভা এবার পেতে চলেছে একটি শক্তিশালী বিরোধী শক্তি। আর এই আশঙ্কায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েও খুশি নয় তৃণমূলের নেতা ও কর্মীরা। কারণ আগামীতে তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ হতে চলেছে একমাত্র বিজেপি। বিরোধী শক্তি হিসেবে রাজ্যে তৃণমূলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলবে বিজেপি। এটা মেনে নিতে পারছে না তৃণমূলের অনেক নেতা ও কর্মীরা। সেজন্য গণনার দিন দুপুর বেলা থেকে রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয়ে যায় রাজনৈতিক হিংসা। বিজেপির পার্টি অফিস, কর্মী ও নেতাদের বাড়ি, বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালায় তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী। সারা রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন জেলায় একের পর এক হামলা হয় বিজেপি নেতা ও কর্মীদের বাড়িতে। একের পর এক নৃশংস খুনে রক্তাক্ত হয়ে চলেছে রাজ্য। আর এরকম এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে 5 মে বুধবার রাজভবনে তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যজুড়ে হিংসার পরিস্থিতির জন্য সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সেই প্রশ্নের জবাবে তিনি অজুহাত দেন, যেহেতু তিন মাস প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে ছিল, সেজন্য এই হিংসার ব্যাপারে তাঁর কিছু করার ছিলনা। কিন্তু, বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল থেকে প্রশ্ন উঠছে, সরকার না হয় তাঁর নিয়ন্ত্রণে ছিল না, তাই বলে দলের নিয়ন্ত্রণ কি তৃণমূল সুপ্রিমোর হাতে ছিল না? রাজ্যজুড়ে এই হিংসার মদদদাতা তৃণমূল কর্মী ও গুন্ডা বাহিনীদের হিংসা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ কি তিনি দিতে পারতেন না?
খোদ কলকাতার বুকে বিধায়ক পরেশ পালের এলাকাতেই পিটিয়ে খুন করা হয়েছে এক বিজেপি কর্মীকে। সেই খুনে সরাসরি পরেশ পালের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন ওই নিহত বিজেপি কর্মীর পরিবারের লোক জনেরা। তাঁদের অভিযোগ, পরেশ পাল বিধানসভা ভোটের সময় হুমকি দিয়েছিলেন, 2 তারিখ গণনার পর যমের দুয়ারে পাঠাবেন ওই বিজেপি কর্মী ও তাঁর দাদাকে।
এদিকে যাদবপুরের বিজেপি প্রার্থী রি়ঙকু নস্করের বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। একটি ভিডিও ফুটেজে তাঁর পরিবার ও নেত্রী স্বয়ং নিজেই দাবি করেছেন, তাঁদের ঘর থেকে টাকা ও গয়না লুট করা হয়েছে। ঘরের ভিতরে তছনছ করে দেওয়া হয়েছে তাঁর বাড়ির আসবাবপত্র। এমনকি খুলে নেওয়া হয়েছে সিলিং ফ্যানও। বৃহস্পতিবার মেদিনীপুরে এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর গাড়িতেও হামলা চালানো হয়েছে।
তবে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে বিজেপি নেতা ও কর্মীরাও। যেখানে বিজেপি শক্তিশালী আছে, সেখানে পাল্টা মার খাচ্ছে তৃণমূল কর্মীরা। বৃহস্পতিবার কোচবিহারে আক্রান্ত হয়েছেন তৃণমূল নেতা উদয়ন গুহ। তিনি অভিযোগ এনেছেন বিজেপির বিরুদ্ধে।
এদিকে শপথ নেওয়ার পর রাজ্যপাল সাংবাদিক সম্মেলনে মমতার সামনেই তাঁকে কঠোরভাবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি এটাও ইঙ্গিত দিয়েছেন, সন্ত্রাস এইভাবে চলতে থাকলে সাংবিধানিক পরিকাঠামোর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবেন। আর এখানেই জল্পনা বেড়েছে। তাহলে কি রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার কথা বলছেন রাজ্যপাল? তবে তৃণমূলের বিরুদ্ধে হিংসার অভিযোগ মেনে নিতে রাজি নন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি পাল্টা অভিযোগ করেছেন, বিজেপির লোকেরাই এই হিংসা চালাচ্ছে। এপ্রসঙ্গে দৃষ্টান্তস্বরূপ কোচবিহারে উদয়ন গুহ-র উপর আক্রমণের কথা উল্লেখ করেন।
অন্যদিকে, ক্রমাগত এই হিংসার প্রতিবাদে শপথ অনুষ্ঠান বয়কট করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। দলের তরফ থেকে দাবি তোলা হয়েছে রাষ্ট্রপতি শাসনের। সেইমতো রাজ্যজুড়ে বিজেপি নেতা ও কর্মীরা বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সন্ত্রাস ও খুনের তথ্য, ছবি ও ভিডিও ফুটেজ সহ প্রমাণ সংগ্রহ শুরু করেছেন। যা চলে যাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দপ্তরে। আদালতে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি করেছে, একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও।