নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা: গত ২০২০ সালের ১৮ মার্চ বাদুড়িয়া থেকে ধরা পড়ে লস্কর জঙ্গি তানিয়া পারভিন। বাদুড়িয়ার মলয়পুরের বাসিন্দা সে। তানিয়া এই জঙ্গি সংগঠনের অনলাইন রিক্রুটমেন্টের প্রধান ছিল। তার মাধ্যমে বাংলায় জঙ্গি সংগঠনের জাল বিস্তার করছিল লস্কর-ই-তোইবা। এই জঙ্গি গোষ্ঠীর একজন পাক মেন্টর আয়েশা সিদ্দিকী। এবার সেই আয়েশার বিরুদ্ধে রেড (কর্নার) নোটিস জারি করল ইন্টারপোল। জানা গিয়েছে, আয়েশা লস্কর প্রধান হাফিজ সইদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। জঙ্গি সংগঠনের অনলাইন রিক্রুটমেন্ট মডিউল চালানোর অভিযোগ আয়েশা ও তানিয়া উভয়ের বিরুদ্ধে। পরে এই মামলার তদন্তভার পায় এনআইএ। যদিও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা আগেই এই মামলায় চার্জশিট জমা দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে কোনও দেশের তদন্তকারী সংস্থা বিদেশে বসবাসকারী কোনও অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার বা হদিশ পেতে গেলে আন্তর্জাতিক পুলিশ ইন্টারপোলের দ্বারস্থ হতে হয়। সেজন্য ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড কর্নার নোটিস জারি করতে হয়। এই প্রোটোকল মেনে ইতিমধ্যে এনআইএ ইন্টারপোলের স্মরণাপন্ন হয়। ইন্টারপোল সেই আর্জিতে অনুমতি দেওয়ার আগে এই মামলার সব দিক খতিয়ে দেখে। এদিকে কলকাতার বিশেষ আদালতে আয়েষার বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারি করতে চেয়ে আবেদনও জানিয়েছিল এনআইএ। আয়েশা বর্তমানে রয়েছে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে। সে এখানকার সারগোডা জেলার কোটমোমেন থানার গলি বারওয়ালির বাসিন্দা। এনআইএ তদন্তে জানতে পেরেছে, আয়েশা পাঞ্জাবের একাধিক প্রদেশ থেকে ভারত বিরোধী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। পাঞ্জাবের শিয়ালকোট, লাহোর ও পাঞ্জাব প্রদেশ থেকে সক্রিয়ভাবে জঙ্গি কার্যকলাপ চালাচ্ছে সে। পাকিস্তানের এইসব প্রদেশ থেকে ভারতের যুবক যুবতীদের মগজ ধোলাই করছে তানিয়ার মেন্টর। এমনকি এই রাজ্যের অনেক যুবক যুবতীকেও নিয়ন্ত্রণ করছে সে।
এদিকে এনআইএ জানতে পেরেছে, অনলাইন রিক্রুটেমন্ট মডিউল খোলার পিছনে তানিয়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল, বাংলা তথা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যুবক-যুবতীদের লস্কর-ই-তোইবার সঙ্গে যুক্ত করা। এজন্য সে হাত মিলিয়েছিল লস্করের কাশ্মীর ও পাকিস্তানের নেটওয়ার্কের সঙ্গে। এনআইএ সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে। এই জঙ্গি সংগঠনের বেশ কয়েকটি অনলাইন গ্রূপ রয়েছে। যার কো-অ্যাডমিন সে নিজেই। লস্করের ট্রেনিং শাখার অন্যতম মাথা আলতাফ আহমেদ রাঠের ও বিলাল দুরানি। যারা তানিয়ার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখত। আয়েশা লস্কর-ই-তোইবার মহিলা শাখার রিক্রুটার। এই আলতাফই আয়েশার সঙ্গে তানিয়ার পরিচয় করিয়ে দেয়।
অন্যদিকে লস্করের ট্রেনিং শাখার আর এক প্রধান বিলাল দুরানি কট্টর ভারত বিরোধী। বিলাল পাকিস্তানের শিয়ালকোটের বাসিন্দা। ভারতে এই জঙ্গি সংগঠন বিস্তারে তার বড় ভূমিকা রয়েছে বলে জানতে পারে এনআইএ। সেজন্য ইন্টারপোল এনআইএ-এর আর্জি মেনে বিলাল দুরানির বিরুদ্ধে ব্লু নোটিস জারি করে। গত অক্টোবর মাসে এই নোটিস জারি করা হয়। তার গতিবিধি ও ডেরা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতেই এই উদ্যোগ।