নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর: পীরগঞ্জ উপজেলার মাঝিপাড়া গ্রামের একটি অংশের নাম বড় করিমপুর। এর চারদিকে সবুজ ধানখেত, মাঝখানে ছোট বসতিতে হিন্দুধর্মাবলম্বী প্রায় ৬৭টি পরিবারের বাস, ঘরসংখ্যা শ খানেক। মোটামুটি সবারই পেশা মাছ ধরা ও বিক্রি। আর্থিক অবস্থাও মোটামুটি একই। কাউকে কাউকে নিম্নবিত্তের কাতারে ফেলা যায়, বাকিরা নিতান্তই দরিদ্র। এই ৬৭ পরিবারের ওপর গত রোববার রাতে ৩০ মিনিটের একটি তাণ্ডব চালানো হয়েছে। ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, ভাঙচুর করা হয়েছে। লুট করা হয়েছে গবাদিপশু, টাকা, স্বর্ণালংকার, ইলেকট্রনিক সামগ্রীসহ অনেক কিছু। আগুন দেওয়া হয়েছে মন্দির, মুদিদোকান ও ব্যাটারিচালিত ভ্যানগাড়িতে।
রাতে হামলা শুরুর পর নারী, শিশু ও পুরুষেরা যে যাঁর মতো পালিয়ে পাশের ধানখেত ও বাঁশবাগানে আশ্রয় নেন। সারা রাত তাঁরা সেখানেই ছিলেন। গতকাল সোমবার ভোরে পুলিশ ও র্যাব ‘হ্যান্ডমাইকে’ ডাকার পর তাঁরা ফিরে এসে দেখেন, বহু বছর ধরে যে ঘরে তাঁরা সংসার করছিলেন, তা ধ্বংসস্তূপ।
কুমিল্লায় গত বুধবার পবিত্র কোরআন অবমাননার খবরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দুদের মন্দির, মণ্ডপ ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ গত রোববার রাতে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের মাঝিপাড়া গ্রামে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের বসতিতে হামলার ঘটনা ঘটল।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও গ্রামের বাসিন্দাদের ভাষ্য, মাঝিপাড়া গ্রামের আরেক এলাকার এক কিশোর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্ট দিয়েছে—এমন অভিযোগ তুলে রোববারই এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হয়। ওই কিশোরের বাড়িসহ আশপাশে পুলিশ রোববার রাতে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে। সেখানে যেতে না পেরে উত্তেজিত শত শত লোক পাশের বড় করিমপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের আরেক বসতিতে হামলা চালায়।
ঘটনার পর গতকাল মাঝিপাড়ায় পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি বিজিবি সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। এলাকার পরিস্থিতি ছিল থমথমে। গতকাল সন্ধ্যায় পুলিশ জানায়, দুটি মামলা হয়েছে। এতে আসামি করা হয়েছে পাঁচ শতাধিক ব্যক্তিকে। প্রায় ৪৫ জনকে আটক করা হয়েছে।
রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, হামলাকারীদের কোনো ছাড় নেই। তারা হানাদার বাহিনীর মতো বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে। তিনি আরও বলেন, আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।