Home State যাঁরা তৃণমূলের মিছিল ও জনসভায় যাচ্ছেন, চুপচাপ তাঁরাই বিজেপিতে ভোট দিচ্ছেন

যাঁরা তৃণমূলের মিছিল ও জনসভায় যাচ্ছেন, চুপচাপ তাঁরাই বিজেপিতে ভোট দিচ্ছেন

245
0

কুমার বিক্রমাদিত্য, কলকাতা: দেখতে দেখতে 2021 বিধানসভা নির্বাচনের 6 দফা ভোট পেরিয়ে এলাম। আর আজ সপ্তম দফার নির্বাচন। কিন্তু, সংবাদ মাধ্যমের পক্ষ থেকে তদন্ত করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, অনিচ্ছা সত্ত্বেও শাসকদলের চোখ-রাঙানিতে ভয় পেয়ে একদল নিরীহ মানুষ তৃণমূলের মিছিলে পা মেলাচ্ছেন। তৃণমূলের জনসভায় যাচ্ছেন। ভরা মাঠে মমতা ও অভিষেকের সঙ্গে গলা মিলিয়ে স্লোগানও দিচ্ছেন। তৃণমূলের প্রশংসা করে অনেক কথাও বলছেন। তৃণমূল নেতাদের প্রশংসায় মন ভরিয়ে দিচ্ছেন। মমতার ভূয়শী প্রশংসা করছেন। এমনকি প্রকাশ্যে বিজেপি সরকার ও মোদী সম্পর্কে তীব্র গালিগালাজ করতেও পিছপা হচ্ছেন না। অথচ ভোটের দিন চুপচাপ পদ্মফুলে ছাপ দিয়ে আসছেন। মুখে যতই মমতার প্রশংসা করুক, মন থেকে তৃণমূল নেতাদের দুর্নীতি, অপশাসন, ভ্রষ্টাচার, মেনে নিতে পারেননি তাঁরা। তাই প্রকাশ্যে বিদ্রোহ বা ঝামেলায় না গিয়ে চুপি চুপি সরকার পাল্টে দেওয়ার কাজটা সেরে নিচ্ছেন। রাজ্যের শিক্ষিত বেকার যুব সমাজ তো একেবারে সম্পূর্ণ মুখ বেঁকিয়ে বসে আছেন। তারা কেউ এই সরকারকে মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না। বিশেষ করে টাকার বিনিময়ে চাকরি, শিক্ষক নিয়োগে বিভিন্ন অনিয়ম। চাকরিতে অর্থনৈতিক লেনদেন। সাধারণ নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষিত যুব সমাজ ক্ষিপ্ত হয়ে আছেন। লেখাপড়া শিখে ভালো চাকরি পাওয়ার যে স্বপ্ন তারা দেখেছিলেন সেই স্বপ্ন আজ ভেঙ্গে গেছে। কারণ গত 10 বছরের বেকারত্ব, নতুন কর্মসংস্থানের পথ সংকুচিত হয়ে যাওয়া, এমনকি সীমিত কয়েকটি ক্ষেত্র বাদে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন বিভাগে নিয়োগ না হওয়ায় এই সরকার সম্পর্কে তাদের মনে হতাশার সৃষ্টি করেছে। বিষ্ণুপুরের বর্তমান বিজেপি সাংসদ তথা প্রাক্তন তৃণমূল নেতা সৌমিত্র খাঁ বছর দুই আগে ইস্কুলে চাকরি নিয়ে যে অর্থনৈতিক লেনদেনের অভিযোগ অভিষেক এবং তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে এনেছিলেন তা রাজ্যের শিক্ষিত বেকার সমাজের মনে যথেষ্ট সন্দেহের উদ্রেক করেছে। সৌমিত্র বাবু সে সময় একটি টিভি চ্যানেলের লাইভ প্রোগ্রামে সরাসরি অভিষেক এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগে সাত থেকে আট লক্ষ টাকা ঘুষ নেওয়া এবং স্কুল শিক্ষকের চাকরির পরীক্ষার নামে প্রহসনের অভিযোগ আনেন। সেই প্রোগ্রামে এই বিস্ফোরক অভিযোগ মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। পৌঁছে যায় সাধারণ নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে সব ধরনের মানুষের মধ্যে। এর ফলে তৃণমূল সম্পর্কে মানুষের মনে যথেষ্ট অবিশ্বাস ও সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি করেছে। পাশাপাশি একাধিক স্কুল শিক্ষা পরীক্ষায় পাস করা ছাত্রছাত্রীদের নিয়োগ না হওয়া, পক্ষপাতিত্ব নিয়ে একাধিক অভিযোগকে যেন পরোক্ষে সিলমোহর দিয়েছে। কিন্তু প্রকাশ্যে মুখ খুলে কেউই শাসকদলের চক্ষুশূল বা হিংসার শিকার হতে চাইছেন না। তাই মুখে মোদির নিন্দা করলেও গোপনে বিজেপিকেই ভোট দিচ্ছেন। তার ওপর একের পর এক তৃণমূলের নেতা মন্ত্রীদের দুর্নীতি রাজ্যবাসীর চোখ খুলে দিয়েছে। মমতার কোন মিথ্যা কথাতেই আর কাজ হচ্ছে না। টেট কেলেঙ্কারি, আম্ফান দুর্নীতি, কাটমানি, সারদা কেলেঙ্কারি, নারদা কেলেঙ্কারি, রাজ্যব্যাপী সিন্ডিকেট রাজ, রোজভ্যালির মত হাজারো চিট ফান্ড কেলেঙ্কারিতে সর্বস্বান্ত পশ্চিমবঙ্গবাসী এখন মুক্তির পথ খুঁজতে ব্যস্ত। তাই মমতার জনসভায় ভুরি ভুরি মিথ্যা কথা আর মন ভুলানো প্রতিশ্রুতি শুনতে রাজি নয় সাধারণ মানুষ। তাঁরা এখন পরিবর্তন মুখী হয়ে উঠেছেন। তাঁরা চাইছেন পাঁচ বছর অন্তর সরকারের পরিবর্তন হোক। এই সরকার যখন কিছু করলো না, তখন দেখাই যাক কেন্দ্রের বিজেপি সরকার কিছু করে কিনা। বিজেপিকে পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় আনার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন রাজ্যের পরিবর্তনকামী মানুষেরা। এই পরিবর্তন যাত্রায় সামিল হয়েছেন রাজ্যের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশও। তারা মনে করছেন, একবার দেখাই যাক! না হলে পাঁচ বছর পর নতুন সরকারটাই আবার পাল্টে দেওয়া যাবে।

Previous articleকবি শঙ্খ ঘোষ স্মরণে
Next articleবই চাই বইকি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here