কলকাতা: আজ, রবিবার ‘ফাইনাল ম্যাচ’! শনিবার তার মহড়া সেরে নিল কলকাতা। বিকেল থেকেই থিকথিকে ভিড় ধর্মতলা, নিউ মার্কেট, পার্ক স্ট্রিট চত্বরে। সন্ধ্যায় রাজপথে জনতার ঢল মনে করিয়ে দিল দুর্গাপুজোর ভিড়কে। একে বড়দিন, তায় উইক-এন্ড। দু’য়ের যুগলবন্দিতে জমজমাট সূচনা হল বড়দিনের উৎসবের। বর্ষশেষ ও নতুন বছরের সূচনা পর্যন্ত চলবে উৎসব। গত দু’বছর করোনা পরিস্থিতিতে বিঘ্নিত হয়েছিল আনন্দের আবহ। খুব সম্প্রতি করোনা নিয়ে কিছু উদ্বেগের খবর সামনে এলেও সেসবে খুব একটা পাত্তা দিতে রাজি নয় উৎসবমুখর জনতা। তার প্রমাণ মিলল শনিবার। সেই সঙ্গে বোঝা গেল, বড়দিন থেকে বর্ষবরণ—এভাবেই মাতোয়ারা থাকবে তিলোত্তমা।
শীতের মিঠে রোদ গায়ে মেখে কাছেপিঠে পিকনিক, প্রিয়জনের সঙ্গে ভিক্টোরিয়া বা সপরিবারে চিড়িয়াখানা ভ্রমণ—এসবই চলতি উৎসবের অঙ্গ। এদিন মানুষের যে উদ্দীপনা দেখা গেল, তা আজ, বড়দিনে কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। শহরের নতুন আকর্ষণ আলিপুর জেল মিউজিয়াম। সেখানেও এদিন ব্যাপক ভিড় নজরে পড়ে। তবে সন্ধ্যা নামতেই জনস্রোতের অভিমুখ ঘুরে যায় পার্ক স্ট্রিটের দিকে। সেই জনস্রোত চলে গভীর রাত পর্যন্ত। আলিপুর চিড়িয়াখানার ভিড় সামাল দিতে পুলিসকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। ট্রাফিক পুলিস পরিস্থিতি বুঝে ডি এল খান রোড দিয়ে অনেক যানবাহন ঘুরিয়ে দেয়। চিড়িয়াখানায় এদিন প্রায় ৩৬ হাজার মানুষ ঘুরতে এসেছিলেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তাদের আশা, বড়দিনে এই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হবে। তাই যানজট এড়াতে চিড়িয়াখানার উল্টোদিকের পার্কিং লট তুলে দেওয়া হয়েছে। ভিড়ের একই ছবি দেখা গিয়েছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে। এদিন সেখানে ২৪ হাজার দর্শক প্রবেশ করেছেন। চিড়িয়াখানার তুলনায় ভিড় কম হলেও বড়দিনে দর্শকসংখ্যায় তারা সব রেকর্ড ছাপিয়ে যাবে বলে আশাবাদী ইকোপার্ক কর্তৃপক্ষ। সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল, বিড়লা তারামণ্ডল, এলিয়ট পার্ক, পার্ক স্ট্রিট সহ মধ্য কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকায় পুলিসের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। মদ্যপ চালকদের ধরতে এদিন সন্ধ্যা থেকেই সক্রিয় হয় পুলিস। রাতে শহরের ৫২টি পিকেট ও ২৩টি নাকা পয়েন্টে তল্লাশি ও নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
পার্ক স্ট্রিটে গিয়ে দেখা গেল, বিদেশি নাগরিকরা অনেকেই উৎসবে শামিল হয়েছেন। বান্ধবীর সঙ্গে বড়দিনের ছুটি কাটাতে চেকোস্লোভাকিয়া থেকে কলকাতায় এসেছেন ডোনাল্ড ইভাকোভিচ। হাঁটতে হাঁটতে বান্ধবীর সঙ্গে তুলে নিলেন সেলফি। তাঁর কথায়, ‘দুর্গাপুজোর সময় একবার এসেছিলাম। কিন্তু বড়দিনে পার্ক স্ট্রিট এসে বুঝলাম, এও কম কিছু নয়।’