সংবাদদাতা, বালুরঘাট: প্রচণ্ড দাবদাহে হাঁসফাঁস অবস্থা গৌড়বঙ্গবাসীর। মালদহ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের বাসিন্দারা বৃষ্টির অপেক্ষায় হাপিত্যেস করে বসে রয়েছেন। গত তিন দিনের মতো বৃহস্পতিবারও সূর্য কার্যত আগুন ঝড়িয়েছে। তীব্র গরমে সাধারণ মানুষের কষ্টের পাশাপাশি কাঠফাটা রোদে জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ায় মাঠে চরতে যাওয়া গবাদিপশুদেরও সমস্যা হচ্ছে। অবিলম্বে বৃষ্টি না হলে গতবারের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন। সেক্ষেত্রে বৃষ্টির ঘাটতি চাষের উপর প্রভাব ফেলবে বলে কৃষকরা মনে করছেন।
এদিন মালদহের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়। বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ কমে ৩৩ শতাংশ হয়। ফলে দুপুরের দিকে ইংলিশবাজার সহ জেলার সর্বত্র শুষ্ক বাতাস বইতে শুরু করে। দুপুরে রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যায়। জরুরি কাজ ছাড়া বাড়ির বাইরে কেউ বের হননি। পথচারীদের ছাতা, টুপি মাথায় ঘুরতে দেখা গিয়েছে। ইংলিশবাজারে ডাব, লস্যির দোকানে ভালো ভিড় দেখা যায়। গরমে ক্ষণিকের শান্তি পেতে অনেকে বরফ দেওয়া সরবতে গলা ভিজিয়ে নেন। তীব্র গরমের সঙ্গে রায়গঞ্জ সহ উত্তর দিনাজপুর জেলায় শুরু হয়েছে তাপপ্রবাহ। আবহাওয়াবিদ বিশ্বজিৎ রায় বলেন, দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলার পাশাপাশি এই জেলাতেও তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। তবে বুধবারের তুলনায় বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা খানিকটা কম ছিল। এদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের থেকে সামান্য বেশি। তাপ প্রবাহের হাত থেকে বাঁচার জন্য কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে না বের হওয়াই ভালো। দিনের বেলায় বাইরে বের হলেই ছাতা অথবা টুপি ব্যবহার করতে হবে।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাতেও বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৩ মে পর্যন্ত বৃষ্টির কোনও পূর্বাভাস নেই। তাপপ্রবাহ তীব্র হওয়ার সম্ভাবনা কার্যত নেই বলে আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে। সকাল থেকে তীব্র গরমে বাসিন্দারা অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন। হাটবাজারগুলিতে তুলনামূলক ভাবে ভিড় কম নজরে এসেছে। বালুঘাটের মাঝিয়ান কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের আবহাওয়াবিদ সুমন সূত্রধর বলেন, এদিন জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন ছিল ২৬ ডিগ্রি। ১৩ তারিখ পর্যন্ত বৃষ্টির কোনও পূর্বাভাস নেই।
এদিকে, গৌড়বঙ্গ জুড়ে তীব্র গরমে গ্রীষ্মকালীন সব্জি, আম ও লিচুর ফলন মার খাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। মালদহ সহ গৌড়বঙ্গের তিন জেলায় এখনও সেচের পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি। ফলে চাষিদের আকাশের দিকেই তাকিয়ে বসে থাকতে হয়। আম ও লিচু গাছে সেচের সমস্যা তেমন না থাকলেও দাবদাহে ফল হলুদ হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, খেতের শাক-সব্জি জলের অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে গাছের গোড়ায় বিন্দু সেচ পদ্ধতির মাধ্যমে জল দেওয়ার জন্য কৃষিদপ্তর চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছে। তবে তা বিকেলের পর দেওয়ার জন্য চাষিদের বলা হচ্ছে। তাতে কম জলে কাজ হবে। রাতভর গাছ জল পাবে। সকালে সেচ দিলে সূর্য সিংহভাগ জল শোষণ করে নেবে। ফলে তাতে কাজের কাজ কিছু হবে না।