মৃন্ময় ভট্টাচার্য
আমি নিত্যদিনের পড়াশোনায় কখনোই বিশ্বাস করি না, কোচিং-এর স্যারের থেকে সাজেশান নিয়ে, তার থেকে বেছে বেছে মনমতো অর্ধেক মনোনীত করে, পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগে, আদাজল খেয়ে, পড়ার চেষ্টা করি। খুব কষ্ট হয়, শুনেছি মুনিঋষিরা বলে থাকেন আনন্দই জীবনের পরম লক্ষ্য, তাহলে ঐ তথাকথিত বুদ্ধিমান ছেলেরা কেন যে জীবনের এই উৎকৃষ্ট সময়টা বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে মহার্ঘ্য সময় নষ্ট করে, আমি কিছুতেই তা বুঝে উঠতে পারিনা!
স্কুলের হাফ ইয়ার্লী পরীক্ষায় আমার রেজাল্টে দু'একটা লাল কালির দাগ থাকলেও, প্রতিবছর এ্যানুয়্যাল পরীক্ষায় এদিক ওদিক ম্যানেজ করে ঠিক পাশ করে যাই। সীট যদি একটু বুদ্ধি খরচ করে ওই ফার্স্ট, সেকেন্ড হওয়া আলুভাতে মার্কা বোকাসোকা ছেলেদের পাশে করে নিতে পারি, এক্কেবারে কেল্লা ফতে।
এবছর নাইন থেকে টেনে ওঠার এ্যানুয়্যাল পরীক্ষার আগে লুডো টুর্নামেন্ট থাকায় স্যারের দেওয়া সাজেশান এর সাজেশানটাও উল্টে পাল্টে দেখা হয়নি। ক্লাসের ফার্স্ট বয় উত্তমের পাশের সিট দখল করে বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস ও অঙ্ক পরীক্ষাগুলো
যা দিয়েছি তাতে টেনেটুনে “টেনে” উঠে যাওয়া প্রায় নিশ্চিত।
আজ জীবন বিজ্ঞান পরীক্ষা, এই পরীক্ষাটা আমার কাছে যেন এক জ্বলন্ত বিভীষিকা। তবে ক্লাসের ফার্স্ট বয় উত্তম যার রোল নান্বার ওয়ান, তার দেখে দুটো প্রশ্নের উত্তর এরই মধ্যে লেখা হয়ে গেছে।
হঠাৎই বিনা মেঘে বজ্রপাত, স্কুলের যে স্যার ক্লাসের সবার প্রিয়, সবাই জানে উনি মধু খেয়ে প্রতিদিন স্কুলে এসে মধুমাখা ভাষায় কথা বলেন, সেই মধুময় জানা হঠাৎ আমাকে বললেন, ওহে লুডো মাষ্টার, আমি বুঝতে পারছি ওখানে পাখার হাওয়া ঠিকমতো যাচ্ছে না, তুমি বরং এখানে এসে আমার টেবিল চেয়ারে বসে বাকি পরীক্ষাটা দাও।
আমি বুঝলাম উনি লক্ষ্য করেছেন আমি উত্তমের খাতা নকল করছি। কি আর করার আছে, বাধ্য হয়ে একেবারে সামনে স্যারের চেয়ারে বসতে হলো। স্যার ভেবেছেন উনি খুব বুদ্ধিমান, আজ আমাকে একেবারে একচালে সাপের মুখে ফেলে দিয়েছেন। উনি জানেন না, উনি যদি গাছের ডালে ডালে চলেন, আমিও চলি পাতায় পাতায়। তৃতীয় কেন বাকি কোনো প্রশ্নের উত্তরই আমার জানা নেই, তাহলে কি ফেল করে যাবো! হঠাৎ একটা তুখোড় বুদ্ধি মাথায় খেলে গেল। যে দুটো প্রশ্নের উত্তর লিখেছিলাম তারপর বড় বড় অক্ষরে লিখে দিলাম
“পরবর্তী অংশ রোল নাম্বার ওয়ানের খাতায় দ্রষ্টব্য”।