কলকাতা: রাজ্য আর রাজ্যপালের টানাপোড়েন রোজই নতুন মোড় নিচ্ছে। রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের শেষতম চমক হল রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরু করা। এক্স হ্যান্ডেলে তিনি জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বিভিন্ন অভিযোগ খতিয়ে দেখবেন। যদিও, সরকারের কাছে এ নিয়ে কোনও চিঠি আসেনি বলেই জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকার সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পরিচালিত হয় না। তাই নির্দেশটি সরকারের কাছেও পৌঁছনো প্রয়োজন।’ এছাড়া, ব্রাত্য বসু, কুণাল ঘোষদের মতো তৃণমূল নেতাদের পাশাপাশি, রাজ্যপালের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুজন চক্রবর্তীর মতো সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।
প্রাক্তন উপাচার্য এবং শিক্ষাবিদদের সংগঠন দি এডুকেশনিস্টস ফোরামও রাজ্যপালের কঠোর সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছে। তাদের বক্তব্য, রাজ্যপাল সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন। নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো ভেঙে দিতে চাইছেন। পাশাপাশি, নিয়ম বহির্ভূতভাবে অর্থও সংগ্রহ করছেন তিনি। নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধি ভেঙে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে সভা করার অভিযোগে বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে মন্ত্রিসভা থেকেই অপসারণের আবেদন জানান রাজ্যপাল। যদিও, এক্স হ্যান্ডেলের সেই বার্তা পরে মুছেও ফেলেন তিনি। এই প্রসঙ্গে ফোরামের বক্তব্য, রাজ্যপালের মাথায় রাখা উচিত দেশে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো রয়েছে। সেটি তিনি এড়িয়ে যেতে পারেন না।
অভিজ্ঞ মহলের দাবি, এই চিঠিতেই রুষ্ট হয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যপাল। এই নির্দেশের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সে প্রসঙ্গে রাজ্যপালের বক্তব্য, ‘গণতন্ত্রে যে কেউ প্রশ্ন তুলতেই পারেন। তবে, আইন এবং নিয়ম বিধি খতিয়ে দেখলেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে।’ যদিও, তৃণমূলের অধ্যাপক সংগঠন ওয়েবকুপা গতকালই বিবৃতি দিয়ে রাজ্যপালকে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো সরাসরি রাজনীতিতে নামার আহ্বান জানিয়েছে। মহম্মদ বিন তুঘলকের সঙ্গে তুলনা সহ তাঁকে ‘পাগল’ আখ্যাও দেওয়া হয়েছে।
রাজ্যপালের রিপোর্ট কার্ডের পাল্টা হিসেবে সরকারের তরফে একটি ন’পাতার রিপোর্ট কার্ড এদিন রাজভবনে পৌঁছয়। সেখানে উপাচার্য নিয়োগে আচার্যের একচ্ছত্র অধিকারকে চ্যালেঞ্জ করে আইনের বিভিন্ন ধারা তুলে দেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু ঐতিহাসিক মামলার রায়ও উল্লেখ করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে আচার্য তথা রাজ্যপাল উপাচার্য নিয়োগ করবেন, এই ব্যাখ্যায় ‘আলোচনা’র সংজ্ঞা এবং ব্যাখ্যাও বিস্তৃত করা হয়েছে। এও বলা হয়েছে, রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন বুঝে উপাচার্য নিয়োগ করার ক্ষেত্রে যোগ্য ব্যক্তি। ঠিক যেমন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, প্রধান বিচারপতি জেলা বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে যোগ্য।