মৃন্ময় ভট্টাচার্য
বর্ষাকে বললাম “তোমাকে তো চিনতে পারা যাচ্ছে না, তুমি তো ছিলেনা এমন ঝকঝকে, যে বর্ষাকে জন্ম জন্মান্তর থেকে চিনি, সে-ই কি তুমি ?”
বর্ষা লাজূক মুখে মুচকি হেসে বললো, “পরিবর্তন যদি সব কিছুর হয়, আমিই বা কেন অপরিবর্তিত থাকবো? মেঘেরা আগে আমার কাছে আসতো মুখ কালো করে, কেঁদে কেঁদে নিঃশেষ করতো নিজেদের, আজ দেখি ওরা অধিকাংশই আসে শুভ্র বেশে হাসি মুখে, নীল আকাশের বুকে পেঁজা তুলোর মতো, আমার তা দেখতে ভালোই লাগে, শরতের সৌন্দর্য প্রাপ্তিতে আমি আল্লাদিত হই। “
বর্ষা আরও বললো “তোমরা পৃথিবীর সবচেয়ে হিংস্র পশু। পশু বললাম বলে কিছু মনে কোরো না, তোমরা নিজেরাই নিজেদের মানুষ নাম দিয়েছো, আর বাকিদের পশু বলে ইতর শ্রেণীভুক্ত করে আত্মশ্লাঘা অনুভব করো। ওদের মতো তোমরাও রক্ত-মাংস দিয়েই তৈরী, শুধু বুদ্ধিটা যা একটু বেশী।”
“বুদ্ধি বেশীই বা বলি কি করে! বোকা কালিদাসের মতোই তো তোমরা ডালের আগায় বসে গোড়া কেটে চলেছো। যে ধরণীকে তোমাদের কবি সাহিত্যিকরা ‘মা’ বলে কালজয়ী সৃষ্টি রচনা করেন, বাস্তবে তোমরা সেই মা’য়ের বুক খুঁড়ে উত্তোলন করে চলেছো তাঁরই দেহাংশ, সেগুলি নাকি তোমাদের খনিজ সম্পদ! সভ্যতা বিকাশের মূল উপাদান! মাতৃদেহাংশ যে গরল, বিষ সেটা বুঝেও বুঝতে চাওনা তোমরা, ওজন স্তরের ফুটো দিন দিন বেড়ে চলেছে, বর্ষাকালে খরা, শীতকালে বন্যা, মরুদেশের বরফ গলে সমুদ্রের জলস্তর ক্রমবর্ধমান, আগামী শতকে ভীষণ খাদ্য সংকট আসন্ন, তবুও তোমাদের ঘুম ভাঙে না! বুদ্ধি মাত্রাতিরিক্ত বলে ?”
"অবিরাম কেটে চলেছো অরণ্য, জলাশয় বোজাচ্ছো, প্লাষ্টিকে ঢেকে দিচ্ছো ধরণী মায়ের দেহ, আর বড় বড় নগর বানিয়ে একশো তলার শীততাপ নিয়ন্ত্রিত শয়নকক্ষে নাক ডেকে ঘুমোচ্ছো। তোমাদের জন্ম দিয়ে 'মা' যে ভুল করেছিলেন, যেন তা শুধরে নেওয়ার ক্ষমতাও তাঁর আছে।"
“মেঘ হাসছে তোমাদের শস্যক্ষেত্রের উপর, কাঁদলে বন্যা হবে নির্জন মরুভুমির দেশে। এবার কাঁদতে হবে তোমাদের। ডাইনোসররা যা বুঝেছিল, আর বেশী দেরী নেই, বুঝবে তোমরাও।”