Home Literature পথে পথে জঙ্গলে – হাতিবাড়ি

পথে পথে জঙ্গলে – হাতিবাড়ি

209
0

দীননাথ চক্রবর্তী
দুই

আমার ভীষণ ভাবে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে অতি স্বাধীন সাধারণ সরল সাদা সিদে পবিত্র ভাবনায় পুরোপুরি অংশ গ্রহণ করে প্রকৃতি ।কোন দিন কাউকে বিমুখ করে না ।এবং নিশ্চিত ভাবে তারই ইচ্ছেয় ইচ্ছেডানার ঘুম ভাঙে ।
গাড়ি ছোটে । NH 6 মেটাল রাস্তার ওপর দিয়ে । হু হু করে । অতি পরিচিত সে পথ । ঠিক যেন উপকূলীয় এক শঙ্খচিল। রাস্তা আজ অনন্য । আলু থালু । একরাশ তন্দ্রার সৌরভে সিক্ত । সাদা বর্ডার দেওয়া কুচ কুচে কালো মেঝেতে এককথায় অনিন্দ্য। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে সুগন্ধি রুমালের মতো রবিবারসীয় ছুটি । রাত্রির শেষে তন্দ্রা চোখে ভোরের তারার মতো স্বপ্ন। গাড়ী ছোটে । স্পিডো মিটারের কাঁটা একশোর ওপরে। চেনা পথে অজানার হাতছানিতে। গতির হেরফের হওয়াতে আমার হৃদয় বুকের ওপর আছড়ে পড়ে সে । বাতাসে গাছ থেকে শিমুল ঝরার মতো । খানিকটার সঙ্গে অনেকটাই ইচ্ছে করে পড়ার বিষয়টি ও বর্তমান। এমন সন্ধিক্ষণে কাঁচ তুলে দেওয়া যায় না । আমাদের সঙ্গে সঙ্গে সমান তালে ছোটে অসম্ভব সুন্দর মৃদু মন্দ বৃষ্টি ,আর বরফের কুচির মতো দখিনা বাতাসের শীতলতা ।তার দুহাতে মুঠো মুঠো মন কেমন করা। আমার কানে ঠোঁট রেখে সে গুনগুন করে ওঠে ‘আমার হারিয়ে যেতে নেই মানা মনে মনে ‘। বাতাসের সাথে সাথে আলো আঁধারি বসন্ত আপন মনে ভিজতে থাকে। আশপাশের দোকান গুলোর ঝাঁপ তখন ও ওঠেনি। ঘুপটি মেরে পড়ে থাকে রাতের অন্ধকার। সমাজ তখন ও জাগেনি। রবিবারের ছুটি উপভোগ করে কড়াই গন্ডায়। একে রবিবার ,তার ওপর মেঘলা দিনের বৃষ্টি । গাছে গাছে চৈত্র সেলের মতো কোথাকার কবেকার বর্ণময় পসরার অপাঙ্গ চাউনি । বাউরিয়াকে পিছনে ফেলে গাড়ী ছোটে। সাধারণত চেনা পথে গাড়ী দ্রুত যেতে চায়। কিন্তু মনের মানুষটি হাত টেনে ধরে। তার গরম নিঃশ্বাস মুখের ওপর। অটোমেটিক্যালি গতি শ্লথ হয়ে যায়। দুধারের সবুজ ক্ষেতে ,ডোবা ,ঝিলের পাড়ে দুধ সাদা বক। তাদের দু ‘ডানায় চৈত্রের কাব্য।
গাছের আড়াল থেকে ডেকে ওঠে একটা কোকিল। ঘুম থেকে ডেকে তোলে স্নিগ্ধ নীরবতাকে। টেলকম পাউডারের মতো গুঁড়ো গুঁড়ো আলো শূন্য থেকে ঝরে পড়ে। দূরে আকাশটা যেখানে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে,সেখানে ঠিক যেন লোধাশুলির জঙ্গল,হাতিবাড়ির জঙ্গল। ডাকে আয় আয় আয় …।প্রণবেশদা মোবাইলে একাত্ম। বাড়িতে গীতা বৌদির জ্বর। আবার মিস্ত্রি লেগেছে। অজয়দার দৃষ্টি তখন চলমান পথের ওপর। স্নিগ্ধ সকালে গাড়ী ছোটে স্মৃতি চেখে চেখে। কোলাঘাট ব্রিজের কাছে এসে গাড়ী থেমে যায় লরির পিছনে। জ্যাম। কারণ নতুন ব্রীজ টা না হয়ে ওঠা। এতদিনে নিশ্চিতভাবে হয়ে যেত। কিন্ত নদীবক্ষে একটা পিলারের তলায় নাকি ডুবে যাওয়া কোন জাহাজ পড়েছে ,তাই পিলার বসে বসে যাওয়া থেকে বিপত্তি। মেদিনীপুর তখন একটু একটু জেগে উঠছে। চলমান কাগজ বিক্রেতা এসে দাঁড়ায়। অজয়দা পঞ্চাশ পয়সা বেশি দিয়ে একটা কাগজ নেয়। আনন্দবাজার।চা বিক্রেতা ও এসে যায়। কিন্তু জ্যাম ছেড়ে যাওয়ায় গাড়ী এগিয়ে যায়। ঘড়িতে তখন সকাল সাতটা।
ক্রমশঃ

Previous articleপথে পথে জঙ্গলে — হাতিবাড়ি
Next articleসেই বাঙালি !

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here