দীননাথ চক্রবর্তী
ছোট্ট একটা ফোন । অজয়দার । চলো কাল বেরিয়ে পড়ি ।হাতিবাড়ি । রাজী ? সত্যি কথা বলতে কী ,এমন একটা সুযোগের জন্য চাতক মন উন্মুখ । কাজে কাজেই এক কথায় রাজী।এই ইচ্ছেটাকে অভ্যাসে রূপ দিতে হলে দুটো জিনিসের ভীষণ ভাবে দরকার। প্রথমত সমমনস্ক কয়েকজন সঙ্গী ।এবং দ্বিতীয়ত ইকনমিক বিষয়টিকে যথাযথ সন্মান দেওয়া । কেননা স্থায়িত্বটা ভীষণ ভীষণ ভাবে জড়িয়ে রয়েছে এই বিষয় দুটির ওপর ।সুতরাং আরো কয়েকটি ফোন । সব সময়ের সাথী ভৌমিকবাবু ,এবার যেতে পারছেন না । ঐ দিন তাঁর জীবনে একটি বিশেষ দিন । এক এবং একমাত্র জীবনের প্ৰিয় মানুষটি চিরদিনের জন্য ছেড়ে চলে গেছে ঐ দিন। শুধু তাঁকেই ঐ দিন স্মরণ করা যায় ।রুটিনে শুধুমাত্র মন্দিরে যাওয়া ।এরপর প্রণবেশদা ও প্রভাসদা ।এক কথায় রাজী । আমাদের চারজনের ইচ্ছেডানা পরিযায়ী পাখির বোহেমিয়ান জীবনের উত্তেজনা নিয়ে রবিবারের সকালের জন্য অপেক্ষা করে রইলো। আর যেন তর সয় না ।হাতিবাড়ি ,পথে বহুশ্রুত লোধাশুলি ,শালবনি জঙ্গল আর সুবর্ণরেখার অমোঘ হাতছানি । জানা থেকে একটু একটু করে রোমাঞ্চ রঙিন অজানার রহস্য কুন্ডে মন পাক খেতে থাকে ।বেশ বুঝলাম আজ রাতের ঘুম শিকেয়।
ভালো করে আলো ফোটার আগেই কয়েকটা ফোন চালাচালির পর যথাসময়ে লাল মারুতি এইট হান্ড্রেড এ সি দরজা গোড়ায় উপস্থিত ।ঘড়িতে তখন সকাল ছটা । গাড়ির ভেতরে অশোক (ড্রাইভার ) আর অজয়দা ।আকাশ থেকে বসন্ত ঝরে পড়ছে টুপ্ টাপ্ …।শূন্য জুড়ে চৈতালি মূর্ছনা। দখিনা বাতাসে হারিয়ে যাওয়ার উন্মাদনা । বলার মতো সঙ্গী ইলিশে গুঁড়ি বৃষ্টি । এমনই দিন শুধু বেড়ানোর জন্য।
এরপর কথা মতো প্রণবেশদা ও প্রভাসদা কে তুলে নিয়ে যাত্রা শুরু ।সময় সকাল ছটা পনের । ট্রাঙ্কে এক্সট্রা প্রিমিয়াম ফুল পেট্রোল ভরে নেয় অশোক । গাড়ী যত না ছোটে , ইচ্ছেডানা ছোটে আরো বেশি বেশি করে । সঙ্গে আরো একজন । যাকে প্রকাশ করা অসম্ভব ।অথচ এর সমস্তটা ঘিরে সে । হৃদয়ের কাছাকাছি ।জ্যোৎস্না ছাড়া যেমন চাঁদ কে ভাবা যায় না,ঠিক তেমনই তাকে ছাড়া ভ্রমণ হয় না ।
( ক্রমশঃ )