Home Health দাঁতের ব্যথায় ভেষজ চিকিৎসা

দাঁতের ব্যথায় ভেষজ চিকিৎসা

86
0

দাঁতের নানা সমস্যার মূল উপসর্গ হল দাঁতে ব্যথা। এর সঙ্গে মাড়ি ফুলে ওঠা, দাঁতের গোড়া থেকে রক্ত বা পুঁজ বের হওয়া, মুখে দুর্গন্ধ, অকালে দাঁত পড়ে যাওয়ার মতো অন্যান্য লক্ষণও থাকতে পারে। অনেকের ঠান্ডা খাবার খেলে দাঁত শিরশির করে, আবার অনেক ক্ষেত্রে দাঁতের সাদা রঙের পরিবর্তনও হয়। দাঁত ও মাড়ির সঠিক যত্নের অভাব এইসব রোগের মূল কারণ। মুশকিল হল অধিকাংশ লোক খাবার খাওয়ার পর ভালো করে মুখ ধোয় না। এর ফলে দাঁত ও মাড়িতে খাবারের কণা জমে ধীরে ধীরে জীবাণু সংক্রমণ হয়। পরবর্তীক্ষেত্রে একে একে শুরুতে বর্ণিত লক্ষণসমূহ প্রকাশ পায়।

১. নিম ডাল: দাঁত ভালো রাখার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল দিনে অন্তত দু’বার ব্রাশ করা। লক্ষ করলে দেখা যায় বর্তমানে প্রায় সমস্ত নামী ব্রান্ডের টুথপেস্টে ভেষজ উপাদান মেশানো হচ্ছে। বাড়িতেও নিম, জাম, শিরীষ প্রভৃতি গাছের নরম ডাল টুথ ব্রাশের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এইসব গাছের নরম ডাল চার থেকে ছয় ইঞ্চি পরিমাপে কেটে এর অগ্রভাগ থেঁতো করে ব্রাশের মতো করে নিতে হয়। এর পর কয়েক ঘণ্টা জলে ভিজিয়ে রেখে নরম হলে খুব আস্তে আস্তে ডালটির সাহায্যে দাঁত মাজতে হবে। দাঁতের সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় ভেষজ নির্যাস এইভাবে সরাসরি দাঁত ও মাড়িকে সুফল দান করে এবং দাঁতের ব্যথা ও সংক্রমণ দূর হয়।

২. পেয়ারা, তুলসী পাতা: পেয়ারা, তুলসী, অশ্বত্থ, কুল প্রভৃতি গাছের কচি পাতা থেঁতো করে ওই পেস্ট দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁতের ব্যথা নিরাময় হয়। দাঁত ভালো করে রাখতে পান পাতা খুব ভালো। পান পাতা দাঁত ও মাড়ির সমস্যা দূরে রাখে। সেই সঙ্গে পান পাতা মাউথ ফ্রেশনার-এর কাজ করে। তবে যে কোনও ভেষজ উপাদান প্রয়োগের পর ভালো করে মুখ ধুয়ে নেওয়া ভীষণ জরুরি।

দাঁতের সংক্রমণ প্রতিরোধে সামান্য কিছু গোটা জিরে চিবিয়ে খেলে খুব ভালো ফল দেয়। জিরে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল গুণে জীবাণু প্রতিরোধ করে।
লবঙ্গ তেল: দাঁতের ব্যথায় লবঙ্গ তেলের ব্যবহার-এর বহুল প্রচলন রয়েছে। লবঙ্গ তেলের অ্যানালজেসিক বা বেদনানাশক গুণ চট করে ব্যথা কমায়, তবে দীর্ঘদিন ধরে লবঙ্গ তেল ব্যবহার করা উচিত নয়।

হঠাৎ দাঁতে ব্যথা শুরু হলে
 সামান্য লবঙ্গ তেল তুলে নিয়ে সরাসরি দাঁতের ব্যথার জায়গায় প্রয়োগ করলে উপকার হয়।
 জলে সামান্য নুন মিশিয়ে তা দিয়ে কুলকুচি করলে উপকার মিলবে। স্বাভাবিক অবস্থায় প্রত্যেকবার খাবার খাওয়ার পর নুন দিয়ে কুলকুচি করা যায়।
 রসুন থেঁতো করে ব্যথার জায়গায় লাগালে উপকার হয়। একটা বা দুটো রসুন চিবিয়ে খেলেও চলবে।
 একইভাবে কাঁচা আদা বা পেঁয়াজ চিবিয়ে খেলেও উপকার হয়।
 শসার পাতলা স্লাইস বা রস ব্যবহার করলে উপকার হবে।
 দাঁতের ব্যথায় গালে বরফ সেক দিলেও, ব্যথার সাময়িক নিরাময় হয়।
 গোলমরিচ চূর্ণ ও সৈন্ধবলবণের মিশ্রণ দাঁতের ব্যথা কমায়।
 দাঁতে ব্যথার সঙ্গে মাড়ি থেকে রক্তপাত হলে সামান্য হিং ব্যবহারে সুফল হয়।
 হঠাৎ করে দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তপাত হতে থাকলে ফটকিরি মেশানো জল দিয়ে কুলকুচি করলে উপকার হয়।
 সর্ষের তেলের সঙ্গে সামান্য নুন মিশিয়ে ওই মিশ্রণ দাঁতের গোড়ায় মালিশ করলে দাঁতের যন্ত্রণা কমে। একইভাবে নুনের পরিবর্তে হলুদ পেস্ট ব্যবহার করলেও কাজ হয়।
 দাঁতের ব্যথা কমাতে ত্রিফলা পাউডার মিশ্রিত জলে মাউথওয়াশ করলে উপকার হবে।

এই সব ঘরোয়া উপায়ে ব্যথা না কমলে এবং সেই সঙ্গে জ্বর, মাড়ি ও মুখ ফুলে থাকা, মাড়ি থেকে রক্তপাত এবং মুখে তীব্র দুর্গন্ধ হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ঠান্ডা খাবার খেলে দাঁতের ব্যথা বেড়ে যায়। আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে গরম খাদ্য খেলে কষ্ট বেশি হয়।

যে ধরনের খাবার খেয়ে যন্ত্রণা বেড়ে যায়, সেই ধরনের খাদ্য খাওয়া চলবে না। দাঁতে জীবাণু সংক্রমণ আটকাতে নিয়মিত ব্রাশ করা দরকার। কর্পূর মিশ্রিত জল মাউথওয়াশ হিসেবে আদর্শ। টুথব্রাশের বিকল্প হিসেবে নিম ও যষ্টিমধুর নরম ডাল ব্যবহার করা যায়।

দাঁত ভালো রাখতে ভিটামিন ডি এবং ক্যালশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। মিষ্টিজাতীয় খাবার খেলে অবশ্যই ভালো করে মুখ ধুতে হয়। মিয়মিত ফল ও শাকসব্জি চিবিয়ে খেলে দাঁত ভালো থাকে।

Previous articleদাঁতে ব্যথা  কী করবেন?
Next articleভারতীয় সেনায় কর্মরত দুই পাকিস্তানী জঙ্গি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here