Home Health ট্রোল করা কি মানসিক সমস্যা?

ট্রোল করা কি মানসিক সমস্যা?

85
0

‘ট্রোলিং’ কী?
 সেলিব্রিটির পোশাক নিয়ে কমেন্ট বক্সে নীতিবাক্য মূলক মতামত প্রদান।  সেলিব্রিটির কাজকর্ম নিয়ে অশ্লীল বাক্য পোস্ট করা।  সেলিব্রিটিদের ছবি এবং কাজকর্মকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের অযৌক্তিক গুজব রটানো।  ইদানীং সেলিব্রিটিদের অভিনীত চরিত্র এবং ডায়ালগ নিয়েও সোশ্যাল মিডিয়াতে ট্রোল করার রীতি শুরু হয়েছে।  তবে শুধু সেলিব্রিটি নয়। অন্যান্য পেশার মানুষদের কার্যকলাপ নিয়েও ট্রোল করার রীতি দেখা যাচ্ছে এখন। এমনকী পারিবারিক কোনও ছবি পোস্ট করেও ট্রোলড হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

নিজের প্রচার এবং বক্তব্য জানানোর স্বার্থে বহু সেলিব্রিটি ফেসবুকে, ট্যুইটারে প্রোফাইল খোলেন। তাঁদের রোজকার কাজকর্মের ছবিও দেন। লক্ষ লক্ষ ফ্যান সেই ছবি দেখতে পান। সেই ছবি দেখে সেলিব্রিটিদের ফ্যানেরা লাইক দেন। বিভিন্ন ধরনের মন্তব্যও করেন। এতদূর পর্যন্ত বিষয়গুলো ঠিক ছিল। কিন্তু এখন নতুন ট্রেন্ড শুরু হয়েছে— ‘ট্রোলিং’।

কী এই ‘ট্রোলিং’?
আলাদা কিছুই নয়। সেলিব্রিটিদের পোস্ট করা ভিডিও বা ছবি নিয়ে নেটিজেনদের করা বিভিন্ন ধরনের কুরুচিকর কার্যকলাপ। তা কেমন সেই কার্যকলাপ? দেখে নেওয়া যাক—
 সেলিব্রিটির পোশাক নিয়ে কমেন্ট বক্সে নীতিবাক্য মূলক মতামত প্রদান।
 সেলিব্রিটির কাজকর্ম নিয়ে অশ্লীল বাক্য পোস্ট করা।
 সেলিব্রিটিদের ছবি এবং কাজকর্মকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের অযৌক্তিক গুজব রটানো।
 এখানেই শেষ নয়। আজকাল সেলিব্রিটিদের অভিনীত চরিত্র এবং ডায়ালগ নিয়েও সোশ্যাল মিডিয়াতে ট্রোল করার রীতি শুরু হয়েছে।
 তবে শুধু সেলিব্রিটি নয়। অন্যান্য পেশার মানুষদের কার্যকলাপ নিয়েও ট্রোল করার রীতি দেখা যাচ্ছে এখন।
এমনকী পারিবারিক কোনও ছবি পোস্ট করেও ট্রোলড হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এ যেন ট্রোল করতে হবে বলেও করা। এমনকী পিতা ও কন্যার ছবি নিয়েও করা হচ্ছে নিম্ন রুচির রসিকতা। তবে এসব ঘটনা ঘটলেও আমাদের সামনে সেভাবে আসে না। সেলিব্রিটিদের নিয়ে ট্রোল করলে তা নজরে আসে বেশি।
সাম্প্রতিক ঘটনার দিকে চোখ রাখলে দেখা যাবে, রানি রাসমণি (দিতিপ্রিয়া রায়) চরিত্রে অভিনয় করা বাচ্চা মেয়েটিকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কুরুচিকর ট্রোলে ভরে গিয়েছিল ফেসবুক। এছাড়া পার্লামেন্টের সামনে অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী ও নুসরতের পোস্ট করা ছবিতে, তাঁদের পোশাক নিয়েও কুৎসিত মন্তব্য করতে ছাড়েনি নেটিজেনরা!
আর শুধু ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামেই নয়, দেখা যাচ্ছে ট্রোল, নানা মর্ফড কুরুচিকর ভিডিও, ফটোশপড ছবি, মেসেজ ঘোরাফেরা করে হোয়্যাটস অ্যাপেও। আরও ভয়ঙ্কর ব্যাপার হল, প্রযুক্তির এমন উন্নতির যুগে ভিডিও মর্ফ করা এবং ফটোশপ করে ছবি বিকৃত করা এমন কিছু অসম্ভব ব্যাপার নয়। তা সত্ত্বেও কিছু মানুষ নিজের যুক্তিবোধকে শিকেয় তুলে সেই মিথ্যে ছবি দেখেই সত্যি হিসেবে বিশ্বাস করছেন!
আর যাঁরা এমন ছবি এবং ভিডিও তৈরি করছেন, সোশ্যাল মিডিয়া ছড়িয়ে দিচ্ছেন— সেই ধরনের মানুষের যুক্তিবোধ বা নীতিবোধ নিয়ে বলার কিছু নেই! তবু তাঁদের এহেন আচরণে সমাজের বিশাল অংশের জান্তব হর্ষে যোগদান দেখে বেশ কতকগুলো প্রশ্ন ওঠে বইকি।
কয়েকটি জরুরি প্রশ্ন
প্রথম প্রশ্নটিই হল— ‘আমরা কি তাহলে নিজেকে প্রশ্ন করতে ভুলে যাচ্ছি?’
কারণ বিকৃত কোনও ছবি হোয়্যাটস অ্যাপে বা ফেসবুকে দেখামাত্র আমরা তা ঝড়ের গতিতে শেয়ার করছি অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না করেই। অথচ ছবি বা ভিডিও আদৌ সত্যি না মিথ্যে, সেই প্রশ্ন কি আমাদের মনে একবারও জাগছে?
অথচ কী আশ্চর্য, সচেতন নাগরিক হিসেবে কুরুচিকর যে কোনও ছবি বা মেসেজ পেলে প্রথমেই আমাদের থমকানো উচিত ছিল! অন্যকে ফরোয়ার্ড করার আগে উচিত ছিল নিজের বিবেককে প্রশ্ন করা। কারণ অনেকক্ষেত্রে ভ্রান্ত ভিডিও দেখে অনেকেই ধর্মীয় হানাহানিতেও জড়িয়ে পড়ছেন আমাদের দেশে! আর এর ফায়দা লুটছে কিছু দুষ্ট মানুষ!
তাই আমাদের নিজেদেরকে প্রশ্ন করা শিখতে হবে। বিশেষত, মেসেজ ফরোয়ার্ড করার আগে, সেলিব্রিটির পোস্টে কুরুচিকর মন্তব্য লেখার আগে নিজেকে ফের প্রশ্ন করুন— ‘আমার হাতে কি সত্যিই এত সময় আছে যে এই সমস্ত ফালতু ট্রোল তৈরি করা নিয়ে মাথা ঘামাবো?’
উত্তর যদি ‘হ্যাঁ’ হয়, তাহলে বুঝতে হবে সমস্যা আসলে অনেক গভীরে।
সমস্যা কতটা গভীরে?
প্রথমত, যে ব্যক্তি সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোলিং করার জন্য অনেকটা সময় খরচ করেন, তিনি আসলে নিজের পরিবারকে অনেক কম সময় দিয়ে থাকেন।
দ্বিতীয়ত, সেলিব্রিটিদের নিয়ে বিভিন্ন রকম ট্রোল তৈরি যাঁরা করছেন, তাঁরা সম্ভবত হীনমন্যতায় ভোগেন। মনে মনে ভাবেন কেন তিনি নিজে ওই জীবনযাপন করতে পারেন না! ওই বিলাসব্যসন তাঁরও পাওয়ার কথা ছিল! সেই না পাওয়ার যন্ত্রণা থেকে সেলিব্রিটিদের ট্রোল তৈরি করা এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানোর কাজ করতে থাকেন তাঁরা।
বেশ, হীনমন্যতায় ভুগে ট্রোলিং করার কাজ না হয় করলেন। কিন্তু এমন কার্যকলাপের পরিণাম কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে সেই ব্যাপারে কি একবারও ভেবেছেন?
একটা কথা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী মানুষটিকে বুঝতে হবে— ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়্যাটসঅ্যাপের মতো কৃত্রিম দুনিয়ায় মানুষগুলিকে রক্তমাংসে দেখা না গেলেও, বর্তমানে এই ভার্চুয়াল জগৎই মানুষের সঙ্গে মানুষের অন্যতম যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে উঠেছে। অতএব ফেসবুক, হোয়্যাটস অ্যাপের মতো ভার্চুয়াল জগতে পোস্ট করা আপনার একটা খারাপ বাক্য, খারাপ কাজ, প্ররোচনামূলক কথাবার্তা আপনারই চরিত্রের দিকে আঙুল তুলে দিতে পারে! দূরে সরে যেতে পারে খুব কাছের আত্মীয়-স্বজনরা! এমনকী সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার করা মন্তব্যে বা তৈরি করা ফটোশপড ছবির থেকে কেউ মানসিকভাবে আঘাত পেলে এবং তাঁর সামাজিক সম্মান ক্ষুণ্ণ হলে হতে পারে আপনার জেল-হেফাজতও! অতএব এখনই সচেতন ও সতর্ক হন। সোশ্যাল মিডিয়ার যথাযথ ব্যবহার শিখুন। সচেতন থাকুন।
মানসিকতা বদলাতে কী করবেন?
 অসংখ্য ভালো গান শোনা যায়, লেখা পড়া যায় এমন সাইট তৈরি হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেখানে ঢুকে গান শুনুন, লেখা পড়ুন।
 সোশ্যাল মিডিয়ায় ভালো এবং নামী মানুষদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করুন। কথা বলুন। সোশ্যাল মিডিয়া আসলে যোগাযোগ বাড়ানোর মাধ্যম।
 সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজগুলি শেয়ার করুন।
 ভালো কাজ দেখলে নিন্দা নয়, প্রশংসা করুন।
 অন্যের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হন। ঈর্ষা করবেন না।
 ভাষার ব্যবহারে সচেতন হন। কারণ এখন সোশ্যালমিডিয়া আমাদের জীবনের অঙ্গ হয়ে গিয়েছে। তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় কেমন ভাষা ব্যবহার করছেন তার উপরে নির্ভর করে আপনার সামাজিক ভাবমূর্তি।
কী করবেন না?
 প্রথমেই স্ক্রিন টাইম কমান। অর্থাৎ সারাদিনে কতক্ষণ সোশ্যাল মিডিয়ায় কাটাবেন তা ঠিক করে নিন। যত কম সময় কাটাবেন ততই ভালো আপনার পক্ষে।
 কোনওরকম উস্কানিমূলক পোস্ট দেখলে হুট করে শেয়ার করবেন না। আগে সত্যি মিথ্যে যাচাই করুন। তারপর নিজের বিবেককে প্রশ্ন করুন, এমন ভিডিও বা ছবি ছড়ালে তার থেকে আখেরে বহু নির্দোষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কি না? কারণ সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার শেয়ার বা পোস্ট করা ছবি ও ভিডিও আরও অসংখ্য মানুষ শেয়ার এবং পোস্ট করবেন।
 সংযত ভাষায় খারাপ কাজের নিন্দা করতে পারেন। তবে কাউকে ট্রোল করবেন না বিনা কারণে।
 কারও দেওয়া পোস্ট পছন্দ না হলে এড়িয়ে যান।
 কোনও ভুল তথ্য দেখলে সংশোধন করতে পারেন। তবে ভাষা ব্যবহারে সংযত হন।
যাঁরা ট্রোলের শিকার, কী করা উচিত?
যাঁরা ট্রোলের শিকার হচ্ছেন তাঁদের জন্য বলব, ট্রোল নিয়ে বেশি মাথা ঘামাবেন না। মনে রাখবেন, আপনার কাজই আপনার পরিচয়। ভালো কাজ করলে মানুষ মনে রাখবে। খারাপ হলে ভুলে যাবে। তাই আরও বেশি কাজের মধ্যে থাকুন। মনে রাখবেন, যশপ্রার্থী হলে, অপযশও মাঝেমধ্যে সহ্য করতে হয়। আর অপযশের একটাই জবাব— আরও বেশি করে ভালো কাজ করা। খুব সমস্যা হলে কয়েকদিন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার বন্ধ রাখুন। বড়ধরনের মানসিক সমস্যা হলে মনোবিদের পরামর্শ নিন।

Previous articleসেলিব্রিটিরা যখন ট্রোলিংয়ের শিকার 
Next articleবিশ্ব ইতিহাসে ৩ সেপ্টেম্বর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here