হলদিয়া: উপরি আয়ের প্রলোভনে পড়ে খেসারত দিতে হল ইঞ্জিনিয়ারকে। অনলাইনে পার্টটাইম জবের আড়ালে জুয়াচক্রে জড়িয়ে প্রায় দু’লক্ষ টাকা খোয়ালেন হলদিয়া আইওসি রিফাইনারির ওই ইঞ্জিনিয়ার। বছর বত্রিশের ওই ইঞ্জিনিয়ারের হোয়াটসঅ্যাপে দিন পনেরো আগে একটি মেসেজ আসে। সেই সূত্রেই একটি অনলাইন সংস্থায় পার্টটাইম জবের অফার পান তিনি। প্রথমে নতুন কাজের জন্য আগ্রহ না দেখালেও ওই সংস্থার লোকজনের কথার জালে জড়িয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনেন। অভিযোগ, অনলাইন জবের আড়ালে ওই সংস্থা আসলে ইলেকট্রনিক্স পণ্য কেনাবেচার নামে জুয়া চক্র চালায়। জব করার জন্য যারা নাম নথিভুক্ত করেন, জুয়া খেলার কৌশলে তাঁদের টাকা দিয়ে বাজি ধরতে বাধ্য করা হয়।
প্রথমে সেখানে বিভিন্ন পণ্যের এক একটি সেট পিছু দর ঠিক করে সেই পরিমাণ টাকা দিতে বলা হয়। এরপর সেই বাজি থেকে পাওয়া লভ্যাংশ আসল সহ ফেরত দেওয়া হয় গ্রাহকদের। প্রথমদিকে লাভের টোপ দিয়ে আরও বেশি টাকা ঢালতে বাধ্য করা হয়। পরে ক্ষতির আশঙ্কা প্রকাশ করে খেলায় অংশ নিতে না চাইলেই ওই সংস্থা টাকা ফেরানো হবে না বলে জানিয়ে দেয়। এইভাবেই ফেঁসে গিয়েছেন আইওসির ওই ইঞ্জিনিয়ার।
পুলিস জানিয়েছে, হলদিয়া টাউনশিপের সেক্টর টেন আইওসি আবাসনের বাসিন্দা একটি জুয়া চক্রের পাল্লায় পড়ে প্রতারিত হয়েছেন বলে অভিযোগ দায়ের করেছেন। ওই চক্রটি তাঁর কাছ থেকে প্রায় দু’লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গত ২৯মার্চ তাঁর মোবাইলে একটি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ আসে। এরপর এক ব্যক্তি নিজেকে উইলিয়াম পরিচয় দিয়ে তাঁর সঙ্গে আলাপ জমায়। সেই সময় সে www.in.bazaarvoice.com নামে একটি ওয়েবসাইটের ঠিকানা দিয়ে পার্টটাইম জবের অফার দেয়। ওই কর্তা বলেন, ওই ব্যক্তির কথায় আমি প্রচণ্ড প্রভাবিত হয়ে পড়ি এবং টাকা ডিপোজিট করার সিদ্ধান্ত নিই। প্রথমে আমি ১৫হাজার টাকা জমা দিয়ে দু’দিন পর ৩হাজার ৮০০টাকা লাভ করি। ফলে আমার আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। প্রথম চারটি ট্রানজাকশনে ভালো লাভ পাই।
এরপর প্রোডাক্ট ডাটা জেনারেশনে অর্থাৎ পণ্যের সংখ্যা বেশি করার জন্য ওই সংস্থা চাপ বাড়াতে থাকে। তাঁকে দ্বিতীয় দফায় ডেটা জেনারেশনের একটি টাস্ক দিয়ে ৬৭হাজার ৫০টাকা জমা করতে বলা হয়। ওই আইওসি অফিসার তাঁর দু’টি অ্যাকাউন্ট থেকে যথাক্রমে ২৫হাজার ও ২৪হাজার ৫০০ টাকা জমা করেন। এরপর তৃতীয় দফায় তাঁকে ২লক্ষ ১৮হাজার ১৭৮টাকা জমা করতে বলা হয়। ওই ইঞ্জিনিয়ার ক্ষতি এড়াতে প্রথমে ৯৮হাজার ১০০টাকা এবং তারপর ৪৭ হাজার টাকা জমা করেন।
ওই আইওসি অফিসার বলেন, সংস্থাটি প্রতিদিনই তাদের অ্যাকাউন্টগুলি বদলে ফেলত। যখন ওদের জানালাম যে আমার ক্ষতি হয়ে যাবে। তখন ওরা জানায়, টাকা না জমা করলে কিছু ফেরত পাবে না। এরপর ওরা প্রায় আড়াইগুণ বাড়িয়ে ৫লক্ষ ৫৪হাজার ৩৯০টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলে, এই টাকা জমা করলে আগের টাকা ফেরত পাবে। তখনই আইওসি কর্তা বুঝতে পারেন, তিনি প্রতারক জুয়া চক্রের খপ্পরে পড়েছেন। পুলিস জানিয়েছে, হলদিয়ায় অনলাইন প্রতারণা মাত্রাছাড়া আকার নিয়েছে। পুলিস তদন্ত শুরু করেছে।