কলকাতা: বিনা দোষে কারাগারের অন্ধকারে কেটে গিয়েছে একুশটা বছর। ভারত, বাংলাদেশ—দুই দেশের আইনি যাঁতাকলে কারান্তরালে দুঃসহ জীবন কাটাচ্ছেন সুন্দরবনের গোসাবার বাসিন্দা চিত্ত গায়েন। অবশেষে সম্ভবত ভাগ্যের শিকে ছিঁড়ল! কলকাতা হাইকোর্টের আবেদনে সাড়া দিল বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। তাদের রায়ে তিনি যে বেকসুর খালাস হয়েছেন অভিযোগ থেকে, এ সংক্রান্ত নির্দেশের কপি পাঠিয়েছে সে দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
২০০৩ সালে মাছ ধরতে গিয়ে জলদস্যুদের কবলে পড়েন চিত্তবাবু। পরে ধরা পড়েন বাংলাদেশ পুলিসের হাতে। তাঁর বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশ, অস্ত্র আইন সহ একাধিক ধারায় মামলা হয়। বাংলাদেশের সাতক্ষীরা নিম্ন আদালত তাঁকে ৩০ বছরের সাজা দেয়। সেই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন চিত্তবাবু। ২০১৬ সালে দু’দেশের বন্দি প্রত্যর্পণের সময় তাঁকে ভারতে ফেরত পাঠানো হয়। তাঁর ঠিকানা হয় আলিপুর সেন্ট্রাল জেল। সেখান থেকে বর্তমানে বারুইপুর সংশোধনাগার। চিত্তবাবু দেশে ফিরলেও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে তাঁর দায়ের করা আবেদনের বিচারপ্রক্রিয়া চলতে থাকে। অবশেষে ২০১৯ সালে বাংলাদেশের শীর্ষ আদালত সাতক্ষীরা নিম্ন আদালতের ওই নির্দেশ খারিজ করে তাঁকে বেকসুর খালাসের নির্দেশ দেয়। কিন্তু সেই নির্দেশের কপি না মেলায় বাধ্য হয়ে জেলেই দিন কাটাতে হচ্ছে চিত্তবাবুকে। রাজ্যের সংশোধনাগারগুলিতে বন্দিদের পরিস্থিতি সংক্রান্ত কলকাতা হাইকোর্টের দায়ের করা স্বতঃপ্রণোদিত মামলার শুনানিতে বিষয়টি তুলে ধরেন আইনজীবী তাপসকুমার ভঞ্জ। তা জানার পরই রেজিস্ট্রার জেনারেলকে অবিলম্বে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি যাচাইয়ের নির্দেশ দেয় প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চ। নির্দেশ মেনে বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনার মারফত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সূত্রের খবর, সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে এসে পৌঁছেছে সেই নির্দেশের কপি। ১৬ জানুয়ারি পরবর্তী শুনানি। সেদিনই নির্দেশের কপি যাচাই করে চিত্তবাবুর মুক্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে হাইকোর্ট।