আরামবাগ: প্রশ্নের উত্তরের পরিবর্তে বাঁচানোর আর্তি! পুরশুড়ার চিলাডাঙি রবীন্দ্র বিদ্যাবীথি হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী পরীক্ষার খাতায় উত্তর নয়, নিজের ব্ল্যাকমেল হওয়ার কথা লিখে আসে। তাকে বাঁচানোর আর্জি জানায়। না হলে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে সে বাধ্য হবে বলে উল্লেখ করা হয়। উত্তরপত্রে ছাত্রীর এমন লেখা দেখে চমকে যান শিক্ষকরা। স্কুলে হুলস্থুল পড়ে যায়। শিক্ষকরা ওই ছাত্রীর সঙ্গে দ্রুততার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পাশে থাকার বিষয়ে আশ্বস্ত করা হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে বিষয়টি শিক্ষাদপ্তর, বিডিও ও থানায় জানানো হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিস এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে।
একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রীর বাড়ির পাশেই যুবকের বাড়ি। অভিযোগ, ওই যুবক লুকিয়ে ছাত্রীটির বাথরুমে স্নান করার ভিডিও মোবাইলে তুলে রাখে। তা দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য জোর করতে থাকে। শারীরিক সম্পর্ক না করলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দেয়। প্রস্তাবে সম্মত হওয়ার জন্য ১৫দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। এই ঘটনায় ছাত্রীটি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। পরিবারের লোকজনকে সে মুখ ফুটে কিছু বলতে পারেনি। বাঁচার পথ হিসেবে স্কুলের একাদশ শ্রেণির পরীক্ষার খাতাকেই বেছে নেয়।
স্কুল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, মেধাবী ওই ছাত্রীটি ইংরেজি পরীক্ষা ঠিকঠাকভাবে দেয়। কিন্তু, বাংলা, অঙ্ক, পদার্থবিজ্ঞান ও বায়োলজির উত্তরপত্রে ধারাবাহিকভাবে তার ব্ল্যাকমেল হওয়ার কথা তুলে ধরে। শিক্ষকদের কাছে তাকে রক্ষা করার আবেদন জানায়। আত্মহত্যার প্রস্তুতির কথাও লেখার মধ্যে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। তার খাতা দেখতে গিয়ে স্কুলের শিক্ষকরা বিস্মিত হয়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে বিষয়টি জানান।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিদ্যুৎকুমার দাস বলেন, ঘটনাটি জানার পরই আমি ওই ছাত্রী ও তার বাবা মাকে স্কুলে ডেকে পাঠাই। ছাত্রীটির সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলি। ভয় না পাওয়ার জন্য আশ্বস্ত করি। স্কুল পরিচালন কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে বিষয়টি প্রথমে শিক্ষাদপ্তর ও বিডিওকে জানানো হয়। বিডিও ম্যাডাম তৎক্ষণাৎ পুলিসকে জানানোর ব্যাপারে সম্মতি দেন। বিষয়টি পরিবারের পাশাপাশি স্কুলের তরফেও পুরশুড়া থানায় জানানো হয়। ছাত্রীটির পরীক্ষার উত্তরপত্রের যাবতীয় জেরক্স কপিও থানায় জমা দেওয়া হয়।
ওই স্কুলের এক শিক্ষক বলেন, ওই ছাত্রী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েও স্কুলে নিয়মিত পরীক্ষা দেয়। তবে সে প্রশ্নের উত্তরের পরিবর্তে পরীক্ষার খাতায় প্রতিদিন তিনপাতা করে নিজের অসহায় অবস্থার কথা লেখে। সে আশা রেখেছিল, স্কুলের শিক্ষকরা তাকে রক্ষা করবে। এটা সৌভাগ্যের যে বিপদ হওয়ার আগেই তাকে আমরা রক্ষা করতে পেরেছি। পুরশুড়া থানার ওসি সোমনাথ দে বলেন, ছাত্রীর বাড়ির কাছেই প্রতিবেশী যুবকের বাড়ি। ওই যুবককে ছাত্রীটি কাকা বলে সম্বোধন করত। কোনওভাবে মেয়েটির বাথরুমে স্নান করার ভিডিও সে মোবাইলে তুলে নেয়। তারপর শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ব্ল্যাকমেল করে। মেয়েটি তার বাবা-মাকে বিষয়টি বলতে পারেনি। পরীক্ষা খাতায় নিজের অসহায় অবস্থার কথা তুলে ধরে। স্কুল শিক্ষকরা তৎপরতার সঙ্গে মেয়েটিকে আত্মহত্যার হাত থেকে রক্ষা করতে পেরেছে। পরিবারের তরফে অভিযোগ করার পর গত শুক্রবার ওই যুবককে গ্ৰেপ্তার করা হয়।