Home Health গরমে মুশকিল আসান আয়ুর্বেদ

গরমে মুশকিল আসান আয়ুর্বেদ

74
0

বসন্তের ফুরফুরে আমেজ আর নেই। গ্রীষ্মের প্রবল গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। সকাল আটটা বাজতে না বাজতেই শুরু হয়ে যাচ্ছে তীব্র গরম। যারা স্কুল কলেজ বা অফিসে যাচ্ছেন তাদের অনেকেই এই আবহাওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। কীভাবে সুস্থ থাকবেন এই প্রখর গ্রীষ্মে, আসুন তা দেখে নেওয়া যাক।
(১) হিট স্ট্রোক: দুপুরে যখন তাপমাত্রা খুব বেড়ে যায় অনেকেই হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। এই পরিস্থিতিতে রোগীকে রি হাইড্রেট করা এবং তার দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনে ঠান্ডা জল অথবা বরফ ব্যবহার করতে হবে। পেঁয়াজের রস কপালে এবং কানের পেছনে লাগালে উপকার হয়। অ্যালোভেরা রসও লাগানো যায়। চন্দনের প্রলেপ কপালে লাগানো যেতে পারে। চন্দন-কলা-লাক্ষাদি-তৈল কপালে লাগালে ভালো ফল হয়। এভাবে রোগী কিছুটা সুস্থ বোধ করলে তাকে দই-এর ঘোল অথবা ধনে ভেজানো জল অথবা ডাবের জল অথবা তুলসীবীজ ও মেথিবীজ ভেজানো জল পান করালে ডিহাইড্রেশন দূর হয়। এছাড়া হিট স্ট্রোক এড়াতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল ও অন্যান্য পানীয় গ্রহণ করতে হয়। তীব্র রোদে না বেরনোই ভালো। নিয়মিত তেঁতুল-চিনি-নুন দিয়ে শরবত খেতে পারেন। আয়ুর্বেদ মতে চন্দন, উশীর, ইক্ষু (আখ), মঞ্জিষ্ঠা, শতারবী, ত্রিফলা প্রভৃতি গ্রীষ্মে দেহকে শীতল রাখে। হিট স্ট্রোকে অনেক সময় ক্রমাগত বমি, সংজ্ঞানাশ প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দেয়। এসব ক্ষেত্রে রোগীকে দ্রুত চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।
(২) জ্বর: গরমকালের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অসুখ হল জ্বর। জ্বর কখনও অতিরিক্ত ঠান্ডা পানীয়, আইসক্রিম, বারবার ঠান্ডা জলে স্নান, রোদ থেকে এসেই এসি ঘরে যাওয়া এইসব কারণে হয়। আবার কখনও কখনও তীব্র গরমে দেহের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়েও জ্বর হতে পারে। জ্বর প্রতিরোধে কালমেঘ, চিরতা, পটল, তুলসী প্রভৃতি ভেষজ নিয়মিত খাওয়া যেতে পারে। যদি অল্প জ্বর থাকে সেক্ষেত্রে গুলঞ্চ, বাসক, শুষ্ঠী দ্বারা প্রস্তুত ওষুধ খেলে ভালো ফল হয়। এইসব ভেষজ গ্রীষ্মকালের অন্যান্য সমস্যা যেমন অরুচি, কাশি, সর্দি প্রভৃতি কমাতেও সমানভাবে উপযোগী। গুলঞ্চ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। যদি সংক্রমণের কারণস্বরূপ জ্বর হয় তবে সুদর্শন ঘন বটী, ত্রিভুবন কীর্তি রস, অমৃতারিষ্ঠ সেবন করতে হবে।
(৩) হিট র‌্যাশ: সাধারণত দেহের যে সব জায়গা ঢাকা থাকে সেখানে এই সমস্যা হয়। সাধারণত লাল বা গোলাপী বর্ণের ছোট ছোট র‌্যাশ দেখা যায়। এক্ষেত্রে যেহেতু ঘামে ত্বকের রোমকূপ বন্ধ হয়ে এই র‌্যাশ হয় তাই নিয়মিত স্নান এবং ত্বক পরিষ্কার রাখা খুবই জরুরি। হলুদ ও চন্দনের প্রলেপ লাগালে উপকার হয়। এছাড়া, অ্যালোভেরা জ্যুস লাগানো যেতে পারে। তরমুজের রস এই সমস্যায় ভালো কাজ দেয়।
(৪) সান বার্ন: পর্যাপ্ত পরিমাণে সানস্ক্রিন লোশন না লাগানো এর কারণ। সূর্যের ক্ষতিকর আলট্রা ভায়োলেট রে এর জন্য দায়ী। মনে রাখা দরকার এই ইউ ভি-রে স্কিন ক্যান্সার পর্যন্ত সৃষ্টি করতে পারে। সান বার্ন সারাতে শসার রসে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে লাগালে উপকার হয়। এছাড়া হলুদ, চন্দন, অ্যালোভেরা উপকারী। টম্যাটোর রস লাগালে ভালো কাজ হয়।
(৫) পেটের সমস্যা ও সংক্রমণ: গরমে এই সমস্যা প্রায়ই হয়ে থাকে। এই সমস্যা এড়াতে বাইরের কাটা ফল, ঠান্ডা পানীয় বর্জন করতে হবে। নিয়মিত খেতে হবে ত্রিফলা ও ত্রিকটু চূর্ণ। ডায়ারিয়া সারাতে কূটজ ঘন বটী, গঙ্গাধর চূর্ণ উপকারী। বিশুদ্ধ জল অবশ্যই পান করতে হবে। যদি কোষ্ঠবদ্ধতা থাকে তবে প্রচুর জল, ত্রিফলা চূর্ণ সেবনে ভালো ফল হয়।
গরমে কিছু সতর্কতা মেনে চলা দরকার
 দুপুর ১২টা থেকে ৩টে পর্যন্ত সূর্যের তাপ সবচেয়ে বেশি থাকে। এই সময় যতটা সম্ভব ঘরের ভেতরে থাকা দরকার।
 বিশেষত শিশু এবং বয়স্কদের দেহে যাতে জলের অভাব না হয় সে জন্য পর্যাপ্ত মাত্রায় পানীয় দেওয়া উচিত।
 দিনে দুই থেকে তিনবার স্নান করলে ভালো হয়। সুতির পোশাক গ্রীষ্ম ঋতুর জন্য আদর্শ।
 ধনে, মৌরী ভেজানো জল সামান্য মিছরিসহ খেলে গরমে শরীর ঠান্ডা থাকে।
 মুথা, উশীর, চন্দন, ক্ষেত পাপরা, শুঁঠ সব ভেষজ জলে ফুটিয়ে, খেলে দেহের জ্বালা ভাব দূর হয়।

Previous articleআজ সোনা রূপার বাজার দর
Next articleহিট স্ট্রোক এড়াবেন কীভাবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here