গ্রীষ্মে ফুটছে গোটা রাজ্য। সকাল সকাল চড়ছে তাপমাত্রার পারদ। বেলা বাড়তেই সূর্যের দাপটে অসহ্য পরিস্থিতি। বাড়ির বাইরে পা রখালেই মিনিট দুয়েকেই ঘেমে নেয়ে স্নান। আর মিনিট দশেকের মধ্যে মাথার চাঁদি ফাটার জোগার! সবমিলিয়ে গরমে ভাজা ভাজা অবস্থা। তবে অবাক করার মতো বিষয় হল, এই তীব্র দাবদাহের মধ্যেও অনেকের ঠান্ডা লাগছে। নাক দিয়ে গড়াচ্ছে জল। আছে হাঁচি, কাশি, সর্দি সবই। তাই স্বভাবতই তাঁদের প্রশ্ন, গরমে ঠান্ডা লাগার কারণ কী?
চটজলদি উত্তর
সাধারণত ভাইরাসের আক্রমণেই ঠান্ডা লাগে। আর গোটা বছরই ভাইরাসের রাজত্ব। শীতের সময়ে সাধারণত ঠান্ডা লাগে রাইনো ভাইরাসের আক্রমণে। আবার গরমে ঠান্ডা লাগার কারণ হিসেবে প্রধান স্থান দখল করে রাখে নন পোলিও এন্টেরো টাইপ ভাইরাস। এই সমস্যার বিজ্ঞানসম্মত নাম হল সামার কোল্ড।
তবে সংখ্যায় অনেক কম হলেও অন্যান্য আরও অনেক ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং অ্যালার্জি থেকেও মানুষের গ্রীষ্মে ঠান্ডা লাগতে পারে।
কেন হয়?
দেহে এই ভাইরাসের প্রবেশ ঘটলে সাধারণত শরীর এই জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করার চেষ্টা করে। কিন্তু গরমে শরীর শুকনো থাকার ফলে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের চেষ্টা সফল হয় না। তখনই মানুষের ঠান্ডা লাগে।
লক্ষণ কী?
হাঁচি, কাশি, মাথাব্যথা, নাক দিয়ে জল গড়ানো, জ্বর বা জ্বর জ্বর ভাব, গা-হাত-পা ব্যথা ইত্যাদি লক্ষণ সামার কোল্ডের দিকে ইঙ্গিত করে।
তবে অ্যালার্জি থেকেও এই একই ধরনের লক্ষণ আসতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে ৯৫ শতাংশ রোগীর শরীরে জ্বর থাকে না।
চিকিৎসা
ভাইরাস গঠিত রোগের তেমন কোনও চিকিৎসা সাধারণত দরকার পড়ে না। এক্ষেত্রে ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে আপনা থেকেই সমস্যা মিটে যায়। জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট এবং অত্যন্ত প্রয়োজনে অ্যান্টি অ্যালার্জিক ট্যাবলেট দেওয়া হয়। তবে ২-৩ দিনের বেশি জ্বর থাকলে অবশ্যই রক্ত পরীক্ষা করাতে হয়। আর কফের রং হলুদ কিংবা সবুজ হলে ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশন রয়েছে ধরে অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হতে পারে।
কারা বেশি সতর্ক হবেন?
পাঁচ বছরের কম বয়সি বাচ্চা এবং ষাটোর্ধ্ব মানুষের ইমিউনিটি কম থাকে। তাই এই বয়সের মানুষের ঠান্ডা লাগার আশঙ্কা বেশি। এছাড়াও এইচআইভি, কোনও সমস্যার কারণে ইমিউনিটি কমে গিয়েছে, দীর্ঘদিন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ইত্যাদি শারীরিক জটিলতা থাকলেও অবশ্যই বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে।
রোগ প্রতিরোধ
এই সময় জলপানের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া দরকার। দিনে ২ থেকে ৩ লিটার জলপান করতেই হবে। তবে বরফ ঠান্ডা জল খাওয়ার কোনও অর্থ নেই। ঠান্ডা জলের গলাকে তৃপ্তি দেওয়া ছাড়া অন্য কোনও কাজ নেই।
শরীর ঠান্ডা রাখতে ২ থেকে ৩ বার স্নান করা যায়।
ভাইরাসের সংক্রমণ আটকাতে হাত ধুতে হবে। বাইরে দিয়ে এসে, বা ঘরেই জানলা-দরজা, খাট, আলমারির ইত্যাদি ছুঁয়ে চট করে মুখে চোখে হাত দেবেন না। এসবের পরই হাত ধুয়ে নেওয়া জরুরি।
এসি ব্যবহারে সতর্ক থাকুন। ঘেমে-নেয়ে চট করে এসি-তে ঢোকা যাবে না। অপরদিকে চট করে এসি থেকে বাইরে যাওয়াও চলবে না।
মরশুমি টাটকা ফল,শাক-সব্জি খান।
হলকা সুতির জামা কাপড় পড়ুন।
যতটা সম্ভব রোদ এড়িয়ে চলুন।
ঠান্ডা লাগার জন্য সমস্যা বাড়লে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যান।