Home Health কোন পরীক্ষা কখন করাবেন?

কোন পরীক্ষা কখন করাবেন?

55
0

নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা জরুরি
শারীরিক পরীক্ষা সম্বন্ধে মানুষের মনে বেশ অনীহা রয়েছে। তবে সত্যি বলতে, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করালে আখেরে নিজেদেরই লাভ। এক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ করতে সুবিধে হয়। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক, ধরুন একটা ২৩ বছরের ছেলে সুগার টেস্ট করালো। রিপোর্টে দেখা গেলে, ঠিক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত না হলেও, তাঁর রক্তে সুগারের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় সামান্য বেশি। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো আর কিছুদিনের মধ্যেই ছেলেটি সুগারে আক্রান্ত হবে। তবে আগেভাগে সমস্যাটি ধরা পড়ে যাওয়ায় ছেলেটি এখন থেকে বেশি সচেতন হয়ে যেতে পারে। নিয়মমাফিক চললে ছেলেটি ডায়াবেটিসকে প্রতিহত বা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সময়কে আরও অনেকদিন পিছিয়ে দিতে সক্ষম হবে। এরই নাম প্রিভেন্টিভ হেল্‌থ চেকআপ। তাই নিয়মিত প্রতিটি মানুষের টেস্টের আওতায় থাকা উচিত। অপরদিকে ইতিমধ্যেই কোনও রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো টেস্টগুলি করে যেতেই হবে।

সদ্যোজাতর রক্ত পরীক্ষা
বাচ্চা জন্মানোর একদম পরপরই বেশ কিছু শারীরিক পরীক্ষা করে নেওয়া দরকার। এই টেস্টগুলিকে নিউবর্ন স্ক্রিনিং টেস্ট বলে। এই পরীক্ষাগুলির মাধ্যমে বাচ্চা কোনও শারীরিক সমস্যা নিয়ে জন্মেছে কি না, এই বিষয়টি সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া যায়। সমস্যা হল, আমাদের রাজ্যে নিউবর্ন স্ক্রিনিং টেস্ট নিয়ে এখনও তেমন কোনও সচেতনতাই নেই। ফলে শিশুর মধ্যে সমস্যা থাকলেও প্রাথমিকভাবে ধরা পড়ছে না। অসুখ মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছানোর পরই টেস্ট করানো হচ্ছে। তাই শিশুর অভিভাবককে এই বিষয়ে অবশ্যই সচেতন হওয়া দরকার। নিউবর্ন স্ক্রিনিং টেস্টের মধ্যে রয়েছে—
 মেটাবলিক স্ক্রিনিং (এমএস) প্যানেল: এই টেস্টে ধরা পড়ে ফ্যাটি অ্যাসিড অক্সিডেশন ডিজঅর্ডার, অর্গানিক অ্যাসিড ডিজঅর্ডার এবং অ্যামাইনো অ্যাসিড ডিজঅর্ডারের সমস্যা।
 এন্ডোক্রাইন ডিজঅর্ডার: টিএসএইচ টেস্টের মাধ্যমে কনজেনিটাল হাইপোথাইরয়েডিজমের সমস্যা থাকলে বেরিয়ে আসে। কনজেনিটাল অ্যাড্রিনাল হাইপারপ্লাসিয়া অসুখটি সম্বন্ধে জানা যায় ১৭ ওএইচ-পি টেস্টের মাধ্যমে।
 ব্লাড সেল ডিজঅর্ডার: গ্লুকোজ-৬-ফসফেট ডিহাইড্রোজিনাস ডেফিসিয়েন্সির সমস্যা ধরিয়ে দেয় জি৬-পিডি টেস্ট।
 ইনবর্ন এরর অব কার্বোহাইড্রেট মেটাবলিজম: টোটাল গ্যালাকটোজ পরীক্ষা করিয়ে গ্যালাকটোসেমিয়া অসুখটি ধরা পড়ে।
 ইনবর্ন এরর অব অ্যামাইনো অ্যাসিড মেটাবলিজম: ফেনিলকেটোনুরিয়া সমস্যা থাকলে জানিয়ে দেয় পিকেইউ টেস্ট। ম্যাপেল সিরাপ ইউরিন ডিজিজ অসুখটি সম্বন্ধে জানায় এমএসইউডি পরীক্ষা।
 জেনেটিক ডিজিজেস অ্যান্ড মেটাবলিক ডিজঅর্ডার: সিস্টিক ফিব্রোসিস সমস্যাটি বোঝা যায় আইআরটি স্ক্রিনিং এসে টেস্টে। বায়োটিনিডেস ডেফিসিয়েন্সি জানতে বিটিডি স্ক্রিনিং এসে পরীক্ষাটি করাতে হয়।
এছাড়াও শিশুদের অনেক ধরনের শারীরিক পরীক্ষা হয়। একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়েই টেস্টগুলি করাতে পারেন।

মেয়েদের বয়স যখন ১২ থেকে ১৪
১২ থেকে ১৪ বছর বয়সের মধ্যে মেয়েদের জীবনে বিভিন্ন ধরনের হর্মোনাল পরিবর্তন হয়। এই বয়সেই শুরু হয়ে যায় মেনস্ট্রুরেশন। এমন সময়ই শরীরে সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে সবথেকে বেশি। অনিয়মিত মেনস্ট্রুয়েশন এমনই একটা সমস্যা। এছাড়াও আরও অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে। সেই সমস্যাগুলিকে এখনই সঠিকভাবে চিহ্নিত না করতে পারলে পরবর্তী সময়ে ফার্টিলিটির সমস্যা হওয়াও সম্ভব। তাই এই সময়টায় বিশেষ করে সতর্ক থাকতে হবে। এই বয়সে শরীরের সব হর্মোনের পরীক্ষাগুলি করে নিলেই ভালো। এর মধ্যে থাকবে এলএইচ, এফএসএইচ, প্রোল্যাকটিন, টেস্টোস্টেরন, প্রোজেস্টেরন ইত্যাদি হর্মোনের পরীক্ষা। একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মতো এই টেস্টগুলি করিয়ে ফেলা জরুরি।

বিয়ের আগে
দু’হাত এক হওয়ার আগে অবশ্যই কয়েকটি বিষয়ে দেখে নেওয়া দরকার—
 থ্যালাসেমিয়া: বিয়ের আগে ছেলে ও মেয়ের দু’জনেরই থ্যালাসেমিয়া টেস্ট করা দরকার। তবে বিয়ের আগে কেন, জন্মানোর ১ বছর পর থেকেই এই টেস্ট করা যায়। এই ছোট একটি টেস্টের মাধ্যমে আগামী দিনে দম্পতির বাচ্চার থ্যালসেমিয়া হওয়ার আশঙ্কা সম্বন্ধে সহজেই জেনে নেওয়া যায়। মনে রাখবেন, দু’জন থ্যালাসেমিয়া কেরিয়ারের মধ্যে বিয়ে হলে তাঁদের সন্তানের থ্যালাসেমিয়া রোগটিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ২৫ শতাংশ। তাই বিয়ের আগে অবশ্যই থ্যালাসেমিয়া টেস্ট করতে হবে।
 ব্লাড গ্রুপ টেস্ট: বিয়ের আগে হবু দম্পতির ব্লাড গ্রুপ জেনে নেওয়া দরকার। কারণ একজনের পজিটিভ ও অন্যজনের নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত হলে দম্পতি দ্বিতীয় সন্তান নেওয়ার সময় বিভিন্ন সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। প্রথমেই এই বিষয়টি জেনে দ্বিতীয় সন্তান নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো একটি বিশেষ ইনজেকশন নিয়ে নিলেই সমস্যা মিটে যায়। তাই অহেতুক জটিলতা এড়াতে বিয়ের আগে ব্লাড গ্রুপ টেস্ট করে নেওয়াই ভালো।
 রক্তের মাধ্যমে সংক্রমণ যোগ্য রোগ: বিয়ের পথে এগিয়ে চলা পুরুষ ও মহিলার মধ্যে কোনও একজনের এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি এর মতো রক্তের মাধ্যমে সংক্রমণ যোগ্য রোগ থাকলে অন্যজনের এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই বিয়ের আগে অন্তত ব্যক্তিগতভাবে প্রতিটি পুরুষ ও মহিলার এই বিষয়টি জেনে রাখা ভালো।

সন্তানসম্ভাবা মায়েদের টেস্ট
সন্তানসম্ভাবা হওয়ার পর থেকে স্বাভাবিকভাবেই একজন মহিলাকে বিভিন্ন টেস্টের মধ্যে থেকে যেতে হয়। এর মধ্যে কয়েকটি পরীক্ষা আবার বিশেষ প্রয়োজনে করতে হতে পারে—
 ভ্রূণের থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা: দু’জন থ্যালাসেমিয়া কেরিয়ারের মধ্যে বিয়ে হলে বাচ্চার থ্যালাসেমিয়া রয়েছে কি না জানতে সিভিএস টেস্ট করতে হয় (কোরিওনিক ভিলাই স্যাম্পেলিং)। সন্তানসম্ভাবা হওয়ার ১০ থেকে ১৪ সপ্তাহ পর এই পরীক্ষা করা হয়। এটি বেশ জটিল প্রক্রিয়া। এক্ষেত্রে ইউটেরাস থেকে ফ্লুইড বের করে তার ডিএনএ টেস্ট করে দেখতে হয়। ডিএনএ রিপোর্টে থ্যালাসেমিয়া ধরা না পড়লে কোনও সমস্যা নেই। আর থ্যালাসেমিয়া ধরা পড়লে আইন মাফিক অ্যাবরশনের রাস্তা বেছে নেওয়া ছাড়া কোনও রাস্তা নেই।
 সন্তানসম্ভাবার বয়স ৩০ পেরলে: ‌বিভিন্ন কারণে মহিলাদের সন্তানসম্ভাবা হওয়ার বয়স অনেকটাই পিছিয়ে গিয়েছে। বেশি বয়সে সন্তানসম্ভাবা হলে বাচ্চার মানসিক ও শারীরিক সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই সমস্যা সমাধানে অনেকসময়ই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সন্তানসম্ভাবার ডাবল মার্কার, ট্রিপল মার্কার, কুয়াড্রুপল মার্কার টেস্ট, কেরিও টাইপিং ইত্যাদি টেস্ট করিয়ে নেন। ভ্রূণের কোনও শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলে এই টেস্টের মাধ্যমে জানতে পারা যায় এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসক ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন।

মহিলার বয়স যখন ৪০
ভারতে সার্ভাইক্যাল ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এই সমস্যা আটকাতে মহিলাদের বয়স ৪০ পেরলেই বছরে অন্তত ১ বার প্যাপ স্মিয়ার টেস্ট করে নিতে হবে। এই টেস্টে কোনও সমস্যা উঠে আসলে কলপোস্কোপ করে দেখে নেওয়া দরকার। পাশাপাশি এই বয়স থেকেই এইচপিভি টেস্ট করাও জরুরি। আশার কথা হল, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস বা এইচপিভি-র এখন টিকা পাওয়া যায়।

নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ৩০ পেরলে
প্রতিবছর নিয়মকরে সকল মানুষকেই রুটিন টেস্ট করিয়ে নেওয়া দরকার। রুটিন টেস্টের মধ্যে প্রথমেই আসবে সুগার পরীক্ষার কথা। ফাস্টিং এবং পিপি টেস্টগুলি সুগারের পরীক্ষার মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। এর মাধ্যমে ব্যক্তির রক্তে সুগারের মাত্রা সম্বন্ধে জানা যায়। তবে এইচবিএ১সি নামের একটি অত্যাধুনিক টেস্ট চলে এসেছে। এই পরীক্ষাতে ব্যক্তির শরীরে শেষ চার মাসের সুগারের গড় তুলে ধরা হয়।
শরীরে কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইডসের মাত্রা বুঝতে লিপিড প্রোফাইল টেস্ট করা দরকার। পাশাপাশি রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা জানতে ইউরিক অ্যাসিড টেস্ট করতে হবে।
আধুনিক জীবনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সূর্যের আলোর সঙ্গে যোগাযোগ কমে যাওয়ায় শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাব ঘটছে। এর ফলে বাড়ছে হাড়ের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা। তাই কম বয়সে বছরে একবার করে ভিটামিন ডি পরীক্ষা করা দরকার।
কিডনির কার্যক্ষমতা বুঝতে রেনাল ফাংশন এবং লিভারের জন্য লিভার ফাংশন টেস্ট করিয়ে রাখতে হবে। পাশাপাশি হার্টের সমস্যার আগাম পূর্বাভাস পেতে এলপি (এ) পরীক্ষাটি করে দেখে নেওয়া উচিত। আর অবশ্যই প্রতি ৬ মাস অন্তর প্রেশার মাপা দরকার।
এই টেস্টগুলির মাধ্যমে কোনও অসুখের ইঙ্গিত থাকলে বা অসুখ ধরা পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো পরীক্ষা করে যেতে হবে।

৬০ পেরলে নজর দিন
সিনিওর সিটিজেনের আওতাও আসলে শরীরকে আরও বেশি করে যত্ন করতে হবে। সুগার, প্রেশার, লিপিড প্রোফাইল, রেনাল ফাংশন, লিভার ফাংশন, চোখের পরীক্ষা, ইলেকট্রোলইটস টেস্ট, ইউএসজি হোল অ্যবডোমিন সহ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী টেস্ট করে যাওয়া দরকার। পুরুষদের ৬০ পেরনোর পরেই পিএসএ টেস্ট করাটাও জরুরি।

Previous articleগরমে টক কেন খাবেন?
Next articleমাথা ঠান্ডা রাখার ডায়েট

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here