Home State শীতলকুচিতে কী হয়েছিল সেদিন? জেনে নেব শীতলকুচির একজন পোলিং অফিসারের মুখে

শীতলকুচিতে কী হয়েছিল সেদিন? জেনে নেব শীতলকুচির একজন পোলিং অফিসারের মুখে

219
0

বিশেষ সংবাদদাতা, কোচবিহার: শীতলকুচির জোরপাটকির বুথ থেকে মাত্র 400 মিটার এর মধ্যে অবস্থান করছে 118 নম্বর বুথ। এই বুথের একজন পোলিং অফিসার স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের থেকে তথ্য সংগ্রহ করে জানালেন সাধারণ মানুষকে। সেই তথ্য ছড়িয়ে দিলেন বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে। কি ঘটেছিল সেদিন, তার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ দিলেন ওই অফিসার। তিনি বলেন, দিনভর উত্তেজনা সামলানো, প্রিয়জনদের উদ্বেগ সামলানো, নিজেদের নার্ভ ধরে রেখে ভোট প্রক্রিয়া চালানো সহজ কথা নয়। একটা যুদ্ধ সামলালাম। লাশ দেখিয়ে ভিডিও, অনেক নিউজ পোর্টালের রিপোর্টিং সব কিছুই দেখলাম। এত কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে বুঝে মনে হলো কিছু কথা সবাইকে জানানো দরকার। কেননা আগের দিন রাত থেকে কি ঘটছে, তা সব খুব কাছ থেকে আমরা শুনতে ও বুঝতে পারছিলাম।

ঘটনার আগের দিন জোরপাটকি স্পেশাল ক্যাডার প্রাইমারি স্কুলে 118 নম্বর বুথে পৌঁছে আমরা কাজ করছি। স্থানীয় যুবকরা ঘোরাঘুরি করছে। আমরা খবর পেলাম পাশের 126 নম্বর বুথে ঝামেলা চলছে। ওখানে 800 ভোটারের মধ্যে সংখ্যালঘু ভোটার 600 আর হিন্দু ভোটার 200 জন। বুঝতেই পারছেন জোরটা ওখানে কার বেশি। আমাদের বুথে এই সংখ্যাটা প্রায় ফিফটি ফিফটি। এখানে সুবিধা করতে পারছে না। সন্ধ্যে থেকেই খবর আসছে, ওই বুথের 200 হিন্দু ভোটারকে ভোটদানে বাধা প্রদান করার জন্য ভয় দেখানো হচ্ছে। রাতভর বোমের আওয়াজও শুনতে পাচ্ছি টুকটাক।

পরদিন ১০ এপ্রিল, ভোট। ১১৮ নম্বর বুথে ভোর পাঁচটা থেকে 200 মানুষ ভোটের লাইনে। মানুষ আন্দাজ করতে পারছিল পাশের 126 নম্বর বুথে গন্ডগোল হলে ভোট দিতে পারব না। তাই সকাল থেকেই লাইনে।
এদিকে সেল্ফ হেল্প গ্রুপ-এর দিদিরা জানাচ্ছেন, আমাদের ওখানে খুব খারাপ অবস্থা স্যার। গন্ডগোল হবে। সকাল থেকেই 126 নম্বর বুথে যথারীতি হিন্দুদের ভোট দিতে বাধা দেওয়া হয়। বিরোধী পোলিং এজেন্ট বসতে দেওয়া হয়নি। ফলস্বরূপ তারা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাহায্য চায়। সেক্টর অফিসার কিউআরটি টিম নিয়ে গেলে বচসা হয়। 50 থেকে 60 জনের একটি দল সিআইএসএফ জওয়ানদের সাথে ঝামেলা শুরু করে। মহিলা ও শিশুদের ডাল বানানো হয়। বাধ্য হয়ে শূন্যে দু’রাউন্ড ফায়ার করে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে হয়। এরপর পরিস্থিতি আরো জটিল হতে শুরু করে। সিআইএসএফ কমান্ড্যান্ট তাদের বুঝিয়ে সুজিয়ে সেখান থেকে চলে আসেন। এরই মধ্যে একটি ছেলে অসুস্থ হলে সিআইএসএফ জওয়ানরা তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে। কিন্তু, কে বা কারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একটি গুজব ছড়িয়ে দেয় যে, তাদের একটি ছেলেকে ফোর্স তুলে নিয়ে গেছে।

এরপর শুরু হয় আসল ঘটনা। গুজবের দ্বারা উত্তেজিত হয়ে দুধেল গাইরা বিশাল সংখ্যায় একত্রিত হয়ে দা, কাটারি, বটি সব নিয়ে সরাসরি বুথে চলে আসে। প্রথমে তারা আশা কর্মীদেরকে আক্রমণ করে মারধর করে। এরপর বুথের ঠিক সামনের দরজায় দাড়ানো রাজ্য পুলিশের লাঠিধারীকে মেরে ফাটিয়ে দেয়। বুথে প্রবেশ করে থার্ড পোলিং অফিসারকে মারতে শুরু করে। প্রিসাইডিং অফিসার বাধা দিতে গেলে তার হাত ভেঙে দেওয়া হয়। এমতাবস্থায় পোলিং পার্সোনালদের বাঁচাতে ফোর্সের রিইনফোর্সমেন্ট চলে আসে। একটা বিষয় অবশ্যই মনে রাখবেন, পোলিং পার্সোনালদের সিকিউরিটি ও জীবন রক্ষা এবং ইভিএম-কে রক্ষা ফোর্সের প্রথম ও সর্বপ্রধান দায়িত্ব।

এদিকে বুথের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফ জওয়ানদের সার্ভিস রাইফেল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়। এতো কিছু হয়ে যাচ্ছে, গুলি কিন্তু তখনও চলেনি। কেন্দ্রীয় বাহিনী সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এমতাবস্থায় ইভিএম রক্ষা, পোলিং পার্সোনালদের জীবন রক্ষা ও কেন্দ্রীয় বাহিনীদের আত্মরক্ষার জন্য রিইনফোর্সমেন্ট কিউআরটি টিম-কে গুলি চালাতেই হত। নইলে পরদিন কাগজে হেডিং হত, ওদের হাতে 4 পোলিং অফিসারের মৃত্যু।

Previous articleএকের পর এক অডিও ক্লিপ ফাঁসে সততার মুখোশ খুলে পড়ছে মমতার
Next articleপাঞ্জাবকে 6 উইকেটে হারাল দিল্লি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here