গ্রীষ্ম হোক বা বর্ষা। মাথা সবসময়ই ঠান্ডা রাখতে হবে। কারণ হঠাৎ উত্তেজিত হলে বিশেষ কিছু নার্ভ এবং কিছু অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি উদ্দীপিত হয়ে পড়ে। যাদের প্রভাবে রক্তচাপ এবং হৃৎস্পন্দন বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে হার্টের ওপর চাপ পড়ে এবং হার্টে অক্সিজেন সহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের চাহিদা বেড়ে যায়। আর যাঁদের ইতিমধ্যে হার্টের অসুখ আগে থেকেই বেঁধে আছে, তাঁদের অ্যানজাইনার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকী হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আর যাঁদের হার্ট ফেলিওর আছে, অর্থাৎ যে ক্ষেত্রে হার্ট যথাযথ পাম্প করতে পারছে না, সেক্ষেত্রে পাম্প ফেলিওর বৃদ্ধি পেয়ে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। বুক ধড়ফড় করার সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
মনে রাখবেন, হার্টের অসুখ থাক আর নাই থাক, উত্তেজিত হলে আমাদের হার্টের গতি বেড়ে যায়। ফলে হার্টের অনিয়মিত ছন্দপতন ঘটার আশঙ্কা থেকে যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে উত্তেজনার বশে হার্টের রেট বেড়ে গিয়ে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে দেখা গিয়েছে। এমনকী কিছু কিছু ব্যক্তির করোনারি আর্টারিতে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ উপসর্গহীন ব্লক থাকে। এই ধরনের মানুষ হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে পড়লে তখন রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে এবং হৃৎপিণ্ডের ছন্দপতন হওয়ার কারণে ব্লক ফেটে গিয়ে সেখানে রক্ত জমাট বেঁধে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
গ্রীষ্মকালে মানুষের উত্তেজনা বাড়ে। আসলে এই সময় পরিবেশ অসহনীয় পড়ে। তাই আমাদের বিরক্তিবোধ বাড়ে। আর যত বেশি মেজাজ খারাপ হয়, হৃৎস্পন্দনের গতিও অনিয়মিত হতে শুরু করে। তার ওপর আবার উত্তেজিত হয়ে পড়লে বা রেগে গেলে উপরিক্ত উপসর্গগুলি দেখা যেতে পারে। এই কারণেই গ্রীষ্মকালে সকলের সাবধানে থাকা দরকার।
উত্তেজনা বাড়লে রক্তচাপও বাড়ে। ফলে আমাদের রক্তবাহী নালীগুলির দেওয়ালে চাপ পড়ে ও ধমনির দেওয়ালগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ত্বরাণ্বিত হয় অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস (রক্তবাহী নালিকার দেওয়ালে কোলেস্টেরল এবং অন্যান্য পদার্থ জমে রক্তবাহী নালি সরু এবং অনমনীয় হওয়া) প্রক্রিয়া। এমনকী রক্তবাহী নালির কোনও কোনও জায়গায় রক্তক্ষরণও হতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের জৈবরাসায়নিক পরিবর্তনের জন্য ধমনির মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধার প্রয়োজনীয়তা বাড়তে পারে। ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে যেমন ব্রেনে ইক্সিমিক স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। এছাড়া রক্তচাপ হঠাৎ মারাত্মক রকম বেড়ে গেলে হাইপারটেনসিভ এনকেপালোপ্যাথি নামে একদরনের স্ট্রোক হতে পারে। আবার কিছু কিছু লোকের শিরায় ছোট ছোট অ্যানিউরিজম (রক্তবাহী নালীর স্ফীতি) থাকে। সেই অ্যানিউরিজম র্যাপচার (ফেটে যাওয়া) হলে ব্রেন হেমারেজ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
রক্তচাপ বেড়ে গেলে আশঙ্কা থাকে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ারও, এমনকী চোখেও রেটিনাল স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আবার পায়ের রক্তবাহী নালিকারও ক্ষতি হওয়ার ভয় থেকে যায়।
গ্রীষ্মকালে উষ্ণ আবহাওয়ার জন্য আমাদের শারীরিক এবং মানসিক অস্বস্তি একটু বেশি থাকে। তাই এই সময়ে জল বেশি করে খাবেন, সঙ্গে জল নিয়ে ঘুরুন, বাইরে রোদে বেরতে হলে মাথায় ছাতা দিয়ে বেরন। অন্যান্য সাবধানতাও অবলম্বন করুন। তবে মোটকথা হল, শুধু গ্রীষ্মকাল নয়, সুস্থ থাকতে হলে সারাবছরই মাথা ঠান্ডা রাখা দরকার। আর নিজের মধ্যে সংযম রাখা দরকার।
উত্তেজিত হয়ে পড়লে, নিজেকে বলুন— ‘আমি রেগে যাব না। কোনও খারাপ কথা বলব না। খারাপ কিছু করবও না। করলে আমারই ক্ষতি।’ এভাবে বারবার নিজের মনের মধ্যে কথাগুলি আউড়ে গেলে উত্তেজনা অনেকটাই প্রশমিত হয়ে যাবে।