শরীরের সঙ্গে মনের যোগ আছে। তাই, শারীরিক ভোগান্তি প্রভাব ফেলে মানসিক স্থিরতার ক্ষেত্রেও। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, আরামদায়ক আবহাওয়ায় আমাদের মেজাজ ফুরফুরে থাকে। আর চরম আবহাওয়ায় মানুষের সুখের অনুভূতি কম হয়। এই কারণেই বসন্তকালে আমাদের মেজাজ থাকে শরিফ আর প্রবল গ্রীষ্মে মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে যায়।
এখন প্রশ্ন জাগতে পারে, সত্যিসত্যিই কি আবহাওয়ার তারতম্যে মানুষের মন মেজাজ ভালো বা খারাপ হওয়া নির্ভর করে? উত্তর হল হ্যাঁ, আবহাওয়ার সঙ্গে মানসিক স্থিরতার যোগ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এদেশে গ্রীষ্মকালে সাইকিয়াট্রিস্টের চেম্বারে রোগীর ভিড় বেড়ে যায়। কারণ আমাদের দেশ হল গ্রীষ্মপ্রধান। ফলে তাপমাত্রা বাড়লে আমাদের শারীরিক কষ্ট হয় বেশি। শারীরিক কষ্ট থেকে মানসিক যন্ত্রণায় পড়া আশ্চর্য নয়।
অন্যদিকে বাইরের শীতপ্রধান দেশে, উদাহরণ হিসেবে ইউরোপের কথা বলা যায়, সেখানে শীতকালে অবসাদে ভোগা রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। বরং গ্রীষ্মকালে ওদেশের লোক আরাম বোধ করেন। শরীর ও মন ভালো থাকে। শীতকালে শীতপ্রধান দেশগুলিতে বাতের ব্যথা, হাতেপায়ে যন্ত্রণা বাড়ে। তুলনায় আমাদের দেশে শীতকালে বাতের যন্ত্রণায় ভোগা রোগীর সংখ্যা কম। অবশ্য মারাত্মক ঠান্ডা পড়লে আলাদা কথা!
এছাড়া বেশ কিছু সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে এদেশে, গ্রীষ্মকালে মানুষের মধ্যে আগ্রাসী মনোভাব বেড়ে যায়। একবার মাথায় রাগ চড়ে গেলে তারপর আর নিজেকে সামলাতে পারা যায় না। মনে হয় এখনই হেস্তনেস্ত করে ফেলা দরকার। এই কারণে গ্রীষ্মকালে কথা কাটাকাটি, হাতাহাতির ঘটনা বাড়ে!
এছাড়া গ্রীষ্মকালে প্রবল ঘাম হয়। শরীরে জলের মাত্রা কমে। তাই ডিহাইড্রেশন হওয়ার ভয় রয়ে যায়। ডিহাইড্রেশন মানেই পেটের গণ্ডগোল। আর কে না জানে, পেট ভালো না থাকলে মেজাজও তিরিক্ষি হয়ে থাকে!
খেয়াল করলে দেখবেন, গরমে অনেকেরই মাথা যন্ত্রণার সমস্যা বাড়ে। আর মাথা যন্ত্রণা হলে মেজাজের বারোটা বেজে যায়। সহ্যশক্তি কমে যায়। সামান্য কথায় মানুষ রেগে যান।
তাই গ্রীষ্মকালে অকারণে উত্তেজিত হতে না চাইলে কতকগুলো নিয়ম মেনে চলুন—
গ্রীষ্মে অন্তত দু’বার স্নান করুন। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে স্নান করুন। ভালো ঘুম হবে। মেজাজও ভালো থাকবে।
এসি ব্যবহারে সতর্ক হন। চট করে এসি থেকে রোদে বা রোদ থেকে এসিতে ঢুকবেন না। আগে কোনও একটা ছায়াপূর্ণ জায়গায় দাঁড়ান। শরীরের তাপমাত্রা বাইরের তাপমাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিক। তারপর এসিতে ঢুকুন বা রোদে বেরন। ঘরের মধ্যে এসির তাপমাত্রা ২২-২৬ ডিগ্রির নীচে রাখবেন না। বাইরে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি আর আপনি ১৬ ডিগ্রিতে বাস করলে শরীরে তার প্রভাব পড়বেই।
সবসময় ঘরে এসি চালিয়ে বসে থাকবেন না। দিনের মধ্যে অন্তত ৬ থেকে ১০ ঘণ্টা ঘরের জানলা দরজা খুলে রাখুন। কারণ এসি থেকে জীবাণু সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা থাকে। ঘরে হাওয়া বাতাস চলাচল করলে জীবাণু সংক্রমণ কম হবে।
রোদে আধঘণ্টার বেশি থাকবেন না। বেশি সময় বাইরে কাটাতে হলে সঠিক ব্যবস্থা নিন। ছাতা, সানগ্লাস, সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
অন্যান্য সময় ৩লিটার জল পান করলে চলে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের। তবে গ্রীষ্মের সময় একলিটার জল বেশি পান করতে হবে। যেখানেই যান সঙ্গে অতিঅবশ্যই জল নিয়ে যাবেন।
বিকেল বেলার স্ন্যাকস-এ কখনই মারাত্মক তেলে ভাজাভুজি খাবেন না। গ্রীষ্মকালে মেটাবলিক রেট-এর ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। এই সময় ভাজাভুজি বেশি খেলে শরীরে অস্বস্তি বাড়বে।
লো ক্যালরি যুক্ত খাদ্য খান। এমন খাবার কান যে খাবারে জলের মাত্রা বেশি আছে। উদাহরণ হিসেবে তরমুজ, শসার কথা বলা যায়।
উত্তেজিত হয়ে পড়লে কীভাবে সামলাবেন?
শুধু গ্রীষ্মকাল বলে নয়। বছরের যে কোনও সময়েই মেজাজ ঠান্ডা রেখে কাজ করতে হবে। তাই উত্তেজনা সবসময়েই পরিহার করা দরকার। কারণ উত্তেজনার বশেই আমরা ভুলভাল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। তাই মাথা গরম হতে শুরু করলে, নিজেকে সময় দিন। হুট করে প্রতিক্রিয়া দিতে যাবেন না। ধরা যাক কেউ আপনার বিরুদ্ধে কথা বলেছ। বিরুদ্ধ বাক্য মানেই সঙ্গে সঙ্গে তাকে এক চড় মেরে দিতে হবে এমন নয়। বরং পাঁচ মিনিট সময় দিন। মনে মনে ভাবুন, আরও পাঁচ মিনিট যাক, তারপর প্রতিক্রিয়া দেখাব। দেখবেন মেজাজ নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকছে। এখানেই শেষ নয়, দেখা গিয়েছে মোট ১২ মিনিট পর্যন্ত এভাবে উত্তেজনার তাড়না নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে আর ঝামেলা করার ইচ্ছেই থাকে না।
যে পরিবেশে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, সেই পরিবেশ ছেড়ে বেরিয়ে আসুন যেমন, ঘরে চারজন মিলে ঝগড়া হচ্ছে। পারলে প্রথমেই বেরিয়ে আসুন সেখান থেকে। দেখবেন সমস্যা হচ্ছে না।