Home Health আপদ বিপদে বাড়িতে রাখার জন্য জরুরি কয়েকটি হোমিওপ্যাথি ওষুধ

আপদ বিপদে বাড়িতে রাখার জন্য জরুরি কয়েকটি হোমিওপ্যাথি ওষুধ

129
0

মরশুমি রোগের জন্য
শীত কাটিয়ে এখন হাজির হয়েছে বসন্ত। এই সময় একদিকে যেমন মাম্‌স, চিকেন পক্স ও নানা ইনফ্লুয়েঞ্জা বা সংক্রামক রোগ ছড়ায়, অন্যদিকে তেমনই ভাইরাল জ্বর-জারির প্রবণতাও বেড়ে যায়। এই ধরনের রোগে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ওষুধ খেতে হবে। তবে, রোগ সারার পর শরীরে যে দুর্বলতা থাকে, তা কাটানোর জন্য ‘ক্যালিফস’ খুব ভালো কাজ দেয়। আবার শিশুদের জ্বর হলে ক্যালিমিউর এবং ফেরাম ফসফেট আলাদা করে খাওয়ানো যেতে পারে। এতে সর্দি বুকে বসে নিউমোনিয়ার মতো কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়। পাশাপাশি, কনজাংটিভাইটিসের মতো চোখের সংক্রমণও এই সময় প্রায় মহামারীর আকার নেয়। এর জন্য বাড়িতে ইউফ্রেশিয়া ড্রপের একটা শিশি রেখে দেওয়া যেতে পারে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর দিনে এবং রাতে এই ড্রপ ব্যবহার করলে সংক্রমণ কমে যায়।
বসন্তের আবেশ কাটতে না কাটতেই এসে পড়বে গ্রীষ্ম। প্রখর দাবদাহে নাভিশ্বাস উঠবে সকলের। এই সময়ে আবহাওয়ায় গরমের তারতম্যের সঙ্গে রোগব্যাধির প্রকোপও পাল্লা দিয়ে বাড়বে। গরমকালে অতিরিক্ত তাপে মাথা দপদপ, লু’র হাওয়া লেগে জ্বর, ঠান্ডা জল খেয়ে গলা ব্যথা, গায়ে শীতবোধ হলে ‘ফাইটোলক্কা’ ওষুধটি বিশেষ কাজ দেয়। আধ কাপ ঈষদুষ্ণ জলে মিশিয়ে এই ওষুধ খেলে উপকার হবেই। এছাড়া যাবতীয় জ্বর, মাথা ধরা, গায়ে-হাতে-পায়ে ব্যথার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে ‘বেলেডোনা’ ওষুধটি বাড়িতে রাখা যেতে পারে।
গ্রীষ্ম কাটিয়ে বর্ষা
বর্ষাকালে একটুতেই সর্দি, জোলো হাওয়ায় ঠান্ডা লাগা ইত্যাদির ক্ষেত্রে নেট্রাম সালফ বিশেষ কাজ দেয়। এছাড়া ‘থুজা’ ওষুধটিও এইসমস্ত রোগের ক্ষেত্রে রোগীকে দেওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি, বর্ষাকালে পেটের সংক্রমণ একটা বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেয়। ডায়ারিয়া, হজমের সমস্যা বা খাদ্যে বিষক্রিয়ার মতো সমস্যা হলে ‘আর্সেনিক অ্যাল্ব’ ওষুধটি বিশেষ কাজে দেয়। কিন্তু, সবক্ষেত্রেই প্রাথমিক পর্যায়ে এই ওষুধ রোগীকে দিতে হবে। উপসর্গগুলি একই থাকলে বা রোগের মাত্রা বাড়লে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, রোগের নাম নয়, বরং রোগ এবং রোগীর সমস্ত লক্ষণসমূহের উপর ভিত্তি করে ওষুধ নির্বাচন করতে হবে। কারণ, হোমিওপ্যাথিতে রোগের নামে কোনও ওষুধ নেই। একই রোগের জন্য সব রোগীকে একই ওষুধ দিলে কাজ হবে না। যেমন ধরুন, ডায়ারিয়ার কথা। ডায়ারিয়ার সঙ্গে যদি পেটে ব্যথা থাকে তবে এক ওষুধ, আর যদি পেটে ব্যথা না থাকে, তবে অন্য ওষুধ। আবার ডায়ারিয়ার ফলে রোগী দুর্বল হয়ে পড়লে অন্য ওষুধ আর যদি দুর্বল না হয়, তবে অন্য ওষুধ। ডায়ারিয়া শুরু হওয়ার কারণের ওপর ভিত্তি করেও ওষুধ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।
বর্ষা পেরিয়ে পুজো
বর্ষা পার করেই আসবে পুজোর মরশুম। আর তার ঠিক পিছন-পিছনই এসে হাজির হবে শীত। শীতকালে মানুষের জ্বর-জারি অন্যান্য ঋতুর তুলনায় একটু বেশিই হয়। উত্তুরে হাওয়া লেগে সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা হলে ‘অ্যাকোনাইট’ অব্যর্থভাবে কাজ দেয়। আবার শীতকালের বাতাসে ভেসে বেড়ানো ধূলিকণার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে শ্বাসকষ্ট হলে, রাতে ঘুম না আসলে, ঘন-ঘন জল তেষ্টা পেলে ‘আর্সেনিক অ্যালবাম’ ওষুধটি খাওয়া যেতে পারে। তাতে প্রাথমিক ক্ষেত্রে কিছুটা উপকার পাওয়া যায়। জ্বরের সঙ্গে যদি জিভ শুকিয়ে যাওয়া, হাত-পা অসাড় হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দিলে ‘ব্রায়োনিয়া’ ওষুধটি রোগীকে দেওয়া যেতে পারে। আপনার রোগের লক্ষণগুলি যে ওষুধের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাবে, সেটিই হবে আপনার উপযুক্ত ওষুধ। মনে করুন আপনার জ্বর হয়েছে; যদি দেখা যায়, আপনার জ্বরের দু’টি লক্ষণ ব্রায়োনিয়া ওষুধটির সঙ্গে মিলে যাচ্ছে, অন্যদিকে তিনটি লক্ষণ বেলেডোনা ওষুধটির সঙ্গে মিলে যাচ্ছে, তাহলে বেলেডোনাই হবে আপনার জন্য উপযুক্ত ওষুধ।
ছোটখাট চোট-আঘাতের জন্য
শরীরের কোনও অংশ পুড়ে গেলে বা গরম কিছুর ছ্যাঁকা লাগলে ক্যান্থারিস ওষুধটি বিশেষ কাজ দেয়। অয়েনমেন্ট এবং ক্রিম—দুই প্রকারেই বাজারে এই ওষুধ পাওয়া যায়। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় অন্তর এটি ব্যবহার করলে ক্ষতস্থান খুব তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। শরীরে কোথাও চোট পেলে, কালসিটে পড়ে গেলে যে ব্যথা হয়, তা নিরাময়ে আর্নিকা মন্ট দারুণ কার্যকরী ভূমিকা নেয়। ধারালো কোনও কিছুতে (ছুরি, কাঁচি) শরীরের কোথাও কেটে গেলে স্ট্যাফিসেগ্রিয়া ওষুধটি বিশেষ কাজ দেয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে আবার অন্য ওষুধ। সেক্ষেত্রে ফেরাম ফসফেট মলম অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে লাগাম পরাতে পারে। এছাড়া বিকট কোনও শব্দে কানে সমস্যা দেখা দিলে হাইপেরিকাম ওষুধটি বিশেষ কাজ দেয়।
ওষুধ খাওয়ার পদ্ধতি ও মাত্রা
হোমিওপ্যাথি একটি উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা বিজ্ঞান। মনে রাখতে হবে, রোগের লক্ষণগুলিই হল রোগের প্রকৃত পরিচয় পাওয়ার একমাত্র রাস্তা। তাই রোগের শারীরিক লক্ষণ, মানসিক লক্ষণ এবং রোগীর ব্যক্তিগত লক্ষণগুলি বুঝতে না পারলে কিংবা গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণগুলি সংগ্রহ করতে না পারলে, সঠিক ওষুধ নির্বাচন করা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে হাজারবার ওষুধ পাল্টে এবং হাজার ডোজ ওষুধ খেয়েও সামান্য ছোটখাট রোগ সারানো যায় না। আবার মারাত্মক অসুখ-বিসুখ কিংবা অনেক বছরেরও পুরনো রোগ-ব্যাধিও মাত্র এক ডোজ ওষুধেই নির্মূল হয়ে যায়। কিন্তু, তার জন্য লক্ষণের সঙ্গে পুরোপুরি মিলিয়ে ওষুধ দিতে হবে। মিশ্রণের (টিংচার) ক্ষেত্রে ওষুধ রোগের মাত্রা বুঝে এক কাপ জলে গুলে ১ ঘণ্টা বা ২ ঘণ্টা অন্তর খাওয়া যেতে পারে। গ্লোবিউল বা ‘বড়ি’র ওষুধের ক্ষেত্রে ৮ থেকে ১০টি করে দানা ঘণ্টা দু’য়েক অন্তর খাওয়া যায়।
সতর্কীকরণ: দীর্ঘদিন ধরে কোনও ওষুধ খাবেন না। রোগের উপশম না হলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করুন।

Previous articleবিশ্ব ইতিহাসে ১৭ মার্চ
Next articleকিভাবে কিডনি ভালো রাখবেন?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here