দিল্লি: ১৯৯০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। গুজরাতের সোমনাথ থেকে ‘রাম রথযাত্রা’ শুরু করলেন লালকৃষ্ণ আদবানি। মণ্ডল কমিশনের রিপোর্ট ও ওবিসি সংরক্ষণের ইস্যুতে দেশজুড়ে শোরগোলের মধ্যেই। সেই আবহেই দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিকে অন্য স্রোতে বইয়ে দিয়েছিল আদবানির সেই রথযাত্রা। মাঝে কেটে গিয়েছে তিন দশকেরও বেশি। ভোটের বছরে বিজেপির ‘হিন্দুত্ব রাজনীতি’র পালে হাওয়া। তারই মধ্যে শনিবার এল নয়া ঘোষণা। দেশের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ভারতরত্নে ভূষিত করা হচ্ছে বিজেপির রামমন্দির আন্দোলনের ‘রথী’ লালকৃষ্ণ আদবানিকে। লোকসভা ভোটের ঠিক আগে আদবানিকে ভারতরত্ন দেওয়ার সিদ্ধান্তে হিন্দুভোট আরও সুসংহত হবে বলেই মত রাজনৈতিক মহলের। ঘটনাচক্রে, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসার পর ‘রাজনৈতিক গুরু’ এই আদবানিকেই দলের ‘মার্গদর্শক মণ্ডলে’র সদস্য করে কার্যত সন্ন্যাসে পাঠিয়েছিলেন স্বয়ং মোদিই। মোদির এই ‘ওয়ান ম্যান শো’ ঘিরে দলের বাজপেয়ি-আদবানি জমানার বহু নেতা অসন্তুষ্ট বলেই খবর। ভোটের আগে হিন্দুত্ব রাজনীতির পাশাপাশি দলের ওই অংশের কাছে কি আদবানিকে নিয়ে ‘প্রায়শ্চিত্তে’র বার্তাও দিলেন মোদি?
ন’য়ের দশকে বিজেপির উত্থানের প্রধান কারিগর আদবানি সবচেয়ে বেশিদিন দলের সভাপতি পদের দায়িত্ব সামলেছেন। এক্স হ্যান্ডলে মোদি বিজেপির ‘লৌহপুরুষ’ সম্পর্কে লিখেছেন, ‘আমাদের সময়ের সবচেয়ে সম্মানীয় রাষ্ট্রনেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। ভারতের উন্নয়নে তাঁর আকাশছোঁয়া অবদান রয়েছে। একেবারে তৃণমূল স্তর থেকে জীবন শুরু করে উপ প্রধানমন্ত্রী পদে উঠে এসে দেশের সেবা করেছেন।’ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরই রাষ্ট্রপতি ভবন থেকেও বিবৃতি দিয়ে আদবানিকে ভারতরত্ন সম্মান প্রদানের কথা জানানো হয়। ভারতরত্ন সম্মানের জন্য নাম ঘোষণা হওয়ার পর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন আদবানি নিজেও।
গত মাসে প্রয়াত সমাজবাদী নেতা তথা বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কর্পূরী ঠাকুরকে মরণোত্তর ভারতরত্ন প্রদানের কথা জানিয়েছিল কেন্দ্র। রাজনৈতিক মহলের মতে, লোকসভা ভোটের আগে ওবিসি ভোটের কথা মাথায় রেখেই মোদি সরকারের এই ঘোষণা। তারই মধ্যে এবার ঘোষণা হল আদবানির নামও। ভোটের বছরে রামমন্দির উদ্বোধন, কর্পূরী ঠাকুর ও আদবানির একযোগে ভারতরত্ন প্রাপ্তি ‘মণ্ডল বনাম কমণ্ডল’ রাজনীতির বৃত্ত পূর্ণ করল বলেই মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।