কোহিমা: কোহিমায় পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণ কী কী? মিউজিয়াম, হেরিটেজ ভিলেজ, ওয়ার সিমেট্রি—তালিকা দীর্ঘ। আর সেই তালিকায় উজ্জ্বলভাবে উপস্থিত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের একটি ট্যাঙ্ক। স্থানীয়রা অবশ্য সেটিকে চেনে ‘নেতাজির ট্যাঙ্ক’ নামে।
‘দেখেছেন?’ নাগাল্যান্ডের সরকারি হোটেল ‘জ্যাপফু’র বাঙালি রাঁধুনি তারক দাসের সঙ্গে আলাপ হওয়ার পর এটাই ছিল তাঁর প্রথম প্রশ্ন। জিজ্ঞাসু চোখে তাকাতেই ফের বললেন, ‘নেতাজির ট্যাঙ্ক, দেখেছেন?’ বাঙালি। নেতাজি নিয়ে স্বভাবতই আবেগ অন্তহীন। একটু বিস্ময় নিয়েই পথনির্দেশ জানতে চাইলাম। আগ্রহ দেখে বেজায় খুশি আদতে নদীয়ার তাহেরপুরের এই বাসিন্দা। বললেন, ‘চলুন। আমিই নিয়ে যাচ্ছি।’
কোহিমা মোড় থেকে দূরত্ব বড়জোড় দু’কিলোমিটার। ট্যাক্সি ভাড়া ১০০ টাকা। কিন্তু তারকবাবুর পরামর্শে হেঁটেই রওনা হলাম। সকালের রোদে ঝকঝক করছে পাহাড়ি শহরটি। শীতের আড়মোড়া ভেঙে ধীরে ধীরে বাড়ছে ব্যস্ততা। ফুটপাত ধরে পৌঁছলাম স্মার্ট সিটি কোহিমার অফিসার্স হিলে। কিছুটা উঁচুতে রয়েছে ট্যাঙ্কটি। উঠতে হবে পাশের সিঁড়ি দিয়ে। রাস্তার ধারে বোর্ডে লেখা—‘কোহিমা ওয়ার্ল্ড ওয়ার টু ব্যাটেল ট্যাঙ্ক’। ভিড় রয়েছে বেশ। তবে অধিকাংশই স্থানীয় বাসিন্দা। ঘুরে ঘুরে ট্যাঙ্ক দেখছেন। সেলফিও তুলছেন দেদার।
আম জনতার আগ্রহ থাকলেও ট্যাঙ্কের বাস্তবিক হাল বেহাল। গা-জুড়ে অযত্নের ছাপ। মিডিয়াম এম-থ্রি লি ট্যাঙ্কের শ্যাওলা রঙ ঢেকেছে কাদা-ধুলোর আস্তরণে। ট্যাঙ্কের বিশেষ রক্ষণাবেক্ষণ না হলেও চারদিকে উঠেছে কংক্রিটের চারটি পিলার। দেওয়াল উঠছে। বসানো হচ্ছে লোহার কাঠামো। শেড দেওয়ার জন্য। স্থানীয়রা জানালেন, বহুদিন অবহেলায় পড়ে থাকার পর সম্প্রতি এনিয়ে সরব হয়েছে সংবাদমাধ্যম। নড়েচড়ে বসেছে সরকার। এসব তারই ফলশ্রুতি।
ট্যাঙ্ক দেখার ফাঁকেই তারকবাবুর কথায় ফিরে এল ইতিহাস। ১৯৪৪ সালের ৬ মে। প্রবল বৃষ্টি। চারপাশ ঢেকেছে অন্ধকারে। পথ হারিয়ে ফেলেছেন ট্যাঙ্কে থাকা ছ’জন ব্রিটিশ সেনা। গাছে ধাক্কা লাগার ফলে আর যাওয়া সম্ভব নয়। কাদায় আটকে যাওয়া ট্যাঙ্ক ফেলেই এলাকা ছাড়লেন ব্রিটিশরা। তারপর কেটেছে ৮০ বছর। স্বাধীন হয়েছে দেশ। ব্রিটিশ সেনার সেই ট্যাঙ্ক সংরক্ষণ করেছে সরকার। যুদ্ধ শহিদদের স্মরণে। সেই পর্বেই জড়িয়ে রয়েছে নেতাজির নাম। কোহিমার এই অঞ্চল থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে রুজাজো গ্রামে ক্যাম্প তৈরি করেছিল আজাদ হিন্দ বাহিনী। ব্রিটিশ ট্যাঙ্কের হাত ধরে সেই স্মৃতি আজও লালন করে চলেছে কোহিমা।