দীননাথ চক্রবর্তী
মাগো আজ আলোর উৎসব
চোদ্দ বাতি জ্বালতে এখন ছাদে
আলোর খোঁজে
তোমার আদুরে ছোট মেয়ে
একটুও ভালো নেই আজ
তাকে ঘিরে এখন জঙ্গলের নীরবতা
বিকার গ্রস্থ সম্পর্ক
একটু একটু করে কবে যেন পাল্টে যায়
স্বত্ব সিঁদুর ভূগোল
এন্টারটিকার তুষার গলিয়ে গলিয়ে
উপত্যকায় এখন জলস্ফীতি
জেগে ওঠে মৃত আগ্নেয়গিরি
জ্বলে যায় প্রতিটি অঙ্গ
সদর অন্দর উঠোন ,
ছিনিয়ে নিয়েছে সোহাগী ঘুম
লজ্জা কেড়েছে কথা
পাছে জেনে যায় আত্মীয় পরিজন
দুহাতে খই ছড়িয়ে যায় উৎকণ্ঠা ।
মাগো তোমার মেয়ে আজ বড় ক্লান্ত
কতদিন ঘুমোয়নি
কোলটা দাওনা মা
মাথা রেখে ঘুমবো আমি
স্নেহহাত বিলি কাটা
উত্তম সুচিত্রা রোমান্স কত গল্প মা মেয়ে
আমার দুখের ঘরের মৌসুমী আকাশ ,
কেন আমি বড় হলাম বলতো মা?
দাদাদের কী করে বলি এখন
বোনের সে লজ্জার কথা ,
ডুবতে ডুবতে তলিয়ে যাই
সংস্কৃতি রুচি সংস্কার অভিব্যক্তি
এমনকি মানসিক জ্যোৎস্নাটুকু।
বড় ধুমধাম করে বিয়ে দিয়েছিল বোনের
কার্পণ্য করেনি এতটুকু
চিরকালই তোমার মন্ত্রে দীক্ষিত
চাহিদা নেই বিশেষ কিছু
তুমিতো জানো মা বরাবরই
মুখফুটে পারিনা চাইতে কিছু
তোমার মতো আমিও যে শান্তি পিয়াসী ।
প্রিয় মানুষের কৃত্রিমতা
হাঁপিয়ে মরে
সকাল বিকেল দুপুর ।
ওর উপস্থিতি যেন
রাতের চলমান এক তাঁত
মিহি অবহেলার জামদানি ,
কোন মেয়ের পক্ষে
সে যে কত বড় লজ্জা
কী করে বলি বলোতো মা?
না বললেও নয়
ভারে ভারে ক্লান্ত ভীষণ ।
কোনদিন ভাবতেই পারিনি
আমার এই দুর্ভাগ্যের কারিগর
সেও এক মেয়ে
চির অচেনা এক মা ।
কী জানি কী ভয়ে
আগলে রাখে ছেলেকে সারাক্ষণ
দিনে রাতে
নিজের হাতে
কখনো সখনো খুনসুটি
মলম লাগানো বিশেষ অঙ্গে
টিভি দেখে একসাথে
মা ছেলে
শোলে বচ্চন বাসন্তি
বৌমা তখন সন্ধ্যা প্রদীপ হাতে ঠাকুরঘরে ।
আঁধার থাকতে ওঠা প্রতিদিন
রোজের বাসি কাজ বাসন মাজা রান্না
এঁটো কাঁটা মাগ্গি বাজার ,
বুঝিয়ে দিয়েছে হাড়ে হাড়ে
দরকার ছিল ওদের এক কাজের মেয়ের ।
মাগো আমার আদরের স্বাধীনতা এখন
স্মৃতিভ্রষ্ঠ এক পথিক
এলোমেলো পথচলা
এদিক ওদিক কানামাছি
উদাসীন যাযাবর ।
তবু ও আসে রোজ
নিক্তি সময়
শিশিরের নীরব পতনের মতো
রাতের গভীর ফুলশয্যা
আমি তখন মরে যাই মা ,
আজও তবু হাই তোলেনি ভ্রুণ
তুলবেওনা কোনদিন ।
তারপর
আবার একটা নতুন দিন মা
আবার একটু বাঁচা
ভোর ছড়িয়ে দেয় আলো
আমার কেবল শূন্য কোল
ভরিয়ে রাখে শুধু
একরাশ একাকীত্ব আর
রক্তাক্ত লজ্জা ।